রুশ ‘অলিগার্কের’ সঙ্গে দেখা করেছিলেন বরিস জনসন
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বড় বেকায়দায় পড়েছেন। একে একে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করায় বরিসের গদি এখন টালমাটাল। এর মধ্যেই নতুন বিতর্ক সামনে এসেছে। বলা হচ্ছে, রুশ অলিগার্ক ও গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক কর্মকর্তা আলেকজান্ডার লেবেদেভের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বরিস জনসন। এ সময় তাঁর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন না। খবর বিবিসির।
বরিস–লেবেদেভের সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস। এতে বলা হয়, লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের মালিক রুশ অলিগার্ক আলেকজান্ডার লেবেদেভ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরদের অলিগার্ক নামে ডাকা হয়। লেবেদেভ এক সময় সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে কাজ করতেন। পুতিনও সংস্থাটির গোয়েন্দা ছিলেন। তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে সখ্যতা।
বরিস রুশ অলিগার্ক আলেকজান্ডার লেবেদেভের ছেলে ইভগেনি লেবেদেভকে ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য করেছেন। ওই সময় থেকে বিতর্ক ছড়ায়, এই মনোনয়ন যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির। সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভগেনির বিষয়টি যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারাও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ বিষয়ে হাউস অব কমন্সের কমিটিতে শুনানির সময় লেবার পার্টির এমপি ডেমি ডায়ানার এক প্রশ্নের জবাবে বরিস জনসন জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৮ সালে ইতালিতে এক অনুষ্ঠানে আলেকজান্ডার লেবেদেভের সঙ্গে তাঁর দেখা ও কথা হয়েছিল। এ সময় তাঁর সঙ্গে সরকারি কোন কর্মকর্তা ছিলেন না।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মাঝে পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমারা। এ সময় আলেকজান্ডার লেবেদেভের সঙ্গে দেখা হওয়ার খবর বরিসকে নতুন করে চাপে ফেলতে পারে। কেননা একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ রক্ষায় ভীষণ চাপে রয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বরিসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেন। তাঁদের অনুসরণ করে বুধবার দেশটির আরও নয়জন জুনিয়র মন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিরোধী লেবার পার্টি বলেছে, বরিস একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলছেন বিরোধীরা। যদিও তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও বরিস ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে সরকার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বরিস ও তাঁর সরকার। করোনা লকডাউন চলাকালে সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক মদের আসর বসিয়ে তিনি সমালোচনার জন্ম দেন। গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় আস্থাভোট আনা হলেও তাতে উতরে যান বরিস।
তবে দলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরিস স্বীকার করেন, ক্রিস পিনচারের অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা ছিল। তারপরও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে ডেপুটি চিফ হুইপ করেন তিনি। এটি ছিল তাঁর একটা ‘বাজে ভুল’। বরিসের এই স্বীকারোক্তি তাঁকে চাপে ফেলে দিয়েছে।