লাখো ব্যবহারকারীর সহজ ‘পাসওয়ার্ড’

মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড
প্রতীকী ছবি

লকডাউনে মানুষের অনলাইন অ্যাকাউন্ট তৈরির হার বেড়েছে। তবে মানুষ এখনো অনলাইনে অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সহজ পাসওয়ার্ডের ওপরেই অধিক নির্ভর করছে। কিন্তু সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কারণে হ্যাকড হয়ে যেতে পারে অনলাইন অ্যাকাউন্ট। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অনলাইনে জটিল ও সহজে অনুমান করা যায় না, এমন পাসওয়ার্ড বেছে নিতে বলছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের লাখো ব্যবহারকারী অনলাইনে তাদের পাসওয়ার্ড হিসেবে পোষা প্রাণীর নাম বেশি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এতে অনলাইন অ্যাকাউন্ট সহজে হ্যাকড করে ফেলতে পারে সাইবার দুর্বৃত্তরা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এনসিএসসির জরিপে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ১৫ শতাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড হিসেবে তাঁদের পোষা প্রাণীর নাম ব্যবহার করেন। ১৪ শতাংশ ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড হিসেবে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ব্যবহার করে থাকেন। ১৩ শতাংশ ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড হিসেবে উল্লেখযোগ্য কোনো তারিখ ব্যবহার করে থাকেন। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার কথা, এখনো ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী অনলাইনে পাসওয়ার্ড হিসেবে পাসওয়ার্ড (password) শব্দটি বা এর অংশবিশেষ ব্যবহার করে থাকেন।
এনসিএসসির পরামর্শ হচ্ছে অনলাইনে কোনো সেবার ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দিতে হলে এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করুন, যা সহজে অনুমান করা যায় না।

এনসিএসসির জরিপে দেখা গেছে, এখনো সহজে অনুমানযোগ্য ও বিপজ্জনক পাসওয়ার্ড হিসেবে অনেকেই তাঁদের সমর্থন করা খেলার টিমের নাম ব্যবহার করেন। এ হার ৬ শতাংশ। এর ছাড়া ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী এখনো এক থেকে ছয় সংখ্যাটি (123456) পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রায় ৫ শতাংশ ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড হিসেবে তাঁদের প্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে রাখেন।

এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে যা অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয় না। এই শব্দগুচ্ছের সঙ্গে চিহ্ন, প্রতীক মিলিয়ে পাসওয়ার্ডকে আরও জটিল করে তোলা যায়।

অবশ্য, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশ পাসওয়ার্ড বিষয়ে সচেতন থাকার কথা বলেছেন। তাঁরা সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড অনলাইনে ব্যবহার করেন না বলেই মত দেন।

এনসিএসসির যোগাযোগ পরিচালক নিকোলা হাডসন সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা পোষা প্রাণীপ্রিয় জাতি হতে পারি, কিন্তু পাসওয়ার্ড হিসেবে সেই নাম ব্যবহার করলে সহজে সাইবার দু্র্বৃত্তদের লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। লাখো অ্যাকাউন্ট ট্রায়াল অ্যান্ড এরর নামের পদ্ধতি ব্যবহার করে সহজে ভেঙে ফেলতে পারে দুর্বৃত্তরা।’

পোষা প্রাণীর সাধারণ নাম যেমন বেলা, কোকো, লুনা বা মিলো বা অন্য কোনো সহজ নাম ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা। পরিবারের সদস্যদের নাম, জন্মতারিখ বা অন্য কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে সহজেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেলতে পারে।

গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের ১ হাজার ২৮২ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে জরিপটি চালানো হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই জরিপ আমাদের আবার দেখিয়েছে মানুষ এখনো সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার কারণে তাদের অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। পোষা প্রাণী বা সন্তানের নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা ভালো কিছু নয়। এটা ক্ষতিকর। একই পাসওয়ার্ড একাধিক ওয়েবসাইটে ব্যবহার করাটা আরও বেশি বিপজ্জনক।’

এনসিএসসির পক্ষ থেকে অনলাইন ব্যবহারকারীদের তিনটি এলোমেলো ও অসংযুক্ত শব্দ পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে যা অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয় না। এই শব্দগুচ্ছের সঙ্গে চিহ্ন, প্রতীক মিলিয়ে পাসওয়ার্ডকে আরও জটিল করে তোলা যায়।

এর বাইরে ই–মেইলের জন্য আলাদা নিরাপদ ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাটি।

এনসিএসসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত বছরে লকডাউনের পর থেকে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট তৈরির হার বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ২৭ শতাংশ ব্যক্তি বলেছেন, তাঁরা অন্তত চারটি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।