‘২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তাঝুঁকি আরও বাড়তে পারে’

জাম্বিয়ায় ডব্লিউএফপির ত্রাণ কর্মসূচি
ফাইল ছবি। ডব্লিউএফপির সৌজন্যে

যুদ্ধ, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যনিরাপত্তা আগে থেকেই ঝুঁকির মুখে ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের মহামারি। এর ফলে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। ২০২০ সালে এই ঝুঁকি ছিল বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত বুধবার ‘নিউ গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ৫৫টি দেশ তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েছে। জনসংখ্যার হিসাবে তা সাড়ে ১৫ কোটি। জনসংখ্যার হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২ কোটি বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। সংস্থাগুলো বলছে, এই সংকট দিন দিন আরও বাড়ছে।

এফএওর মহাপরিচালক কু ডংইউ বুধবার এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ‘পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সে জন্য আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ সংকট মোকাবিলায় ‘দ্রুত মানবিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

‘নিউ গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে একটি টুইট করেছেন কু ডংইউ। ওই টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই সংকটের উৎস চিহ্নিত করতে হবে। কৃষি-খাদ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী, দক্ষ, সর্বব্যাপী ও টেকসই করতে হবে।’

গত বছর খাদ্যসংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ইইউ, এফএও এবং ডব্লিউএফপির সমন্বয়ে গঠিত গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অ্যাগেইনস্ট ফুড ক্রাইসিস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২৮টি দেশের ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্যসংকটে ভুগছে। এই ২৮ দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা তিন দেশ ইয়েমেন, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো ও আফগানিস্তান। এ ছাড়া খাদ্যসংকট ‘বিপর্যয়ের’ পর্যায়ে ছিল বুর্কিনা ফাসো, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেনের ১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ।

২০১৯ সালেও খাদ্যসংকট সবচেয়ে বেশি ছিল আফ্রিকা মহাদেশে। মহাদেশটির ৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে ওই বছর খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের ৬৩ শতাংশ ছিল এই মহাদেশের।

২০২০ সালের চিত্র তুলে ধরে এফএওর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলাবিষয়ক পরিচালক ডোমিনিক বার্জন বলেন, ২০২০ সালে খাদ্যসংকটে ভুগেছে ১০ কোটি মানুষ। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ। আর্থিক সংকটই খাদ্যঘাটতির মূল কারণ। এই সংকটের কারণে খাদ্যঘাটতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ৪ কোটি মানুষ। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। সুদান, জিম্বাবুয়ে ও হাইতি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দেশগুলোয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি।

ডোমিনিক বার্জন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। এর ফলে আগামী বছর পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ৪০টি দেশের ১৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ এই সংকটের মধ্যে পড়তে পারে।