৯ মাসেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন ধনীরা, গরিবদের লাগবে ১ দশক: অক্সফাম

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে যখন বিপর্যয়কর অবস্থা, তখন ১ হাজার শীর্ষ ধনী এই মহামারি চলাকালেও মাত্র ৯ মাসে তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। তবে করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কয়েক শ কোটি দরিদ্র মানুষের এক দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক নতুন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) উদ্বোধনী দিনে বিশ্বে ‘অসমতা ভাইরাস’ নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।

করোনা মহামারি শুরুর পর আমরা মানুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখেছি। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দেখা দেওয়া গভীর বিভক্তি ভাইরাসের মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। চাতুর্যের অর্থনীতিতে সম্পদ দরিদ্রদের কাছ থেকে ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে, যাঁরা মহামারিতেও বিলাসী জীবন যাপন করছেন।
গ্যাব্রিয়েলা বুচার, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড–১৯ একযোগে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ধনী–গরিবের মধ্যে আর্থিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে। এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে থেকে দেশে দেশে অর্থনৈতিক অসমতা দেখা দেওয়া শুরু হয়। তবে এই প্রথম একই সময়ে প্রায় প্রতিটি দেশে অসমতা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটল। অসমতা বাড়ার অর্থ হলো, বিশ্বের যে শীর্ষ ১০০০ ধনী (যাঁদের অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ও শত কোটিপতি) মাত্র ৯ মাসে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের মতো কোভিড–পূর্ব অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরতে দরিদ্র মানুষের অন্তত ১৪ গুণ বেশি সময় লাগতে পারে।

করোনা মহামারি চলার মধ্যেই গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত এশিয়ায় ৭১১ জন শত কোটিপতির সম্পদ বেড়েছে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোভিড–১৯–এর প্রভাবে দরিদ্র হয়ে গেছেন এমন ১৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে এই অর্থ দিয়ে ৯ হাজার ডলারের এক একটি চেক দেওয়া সম্ভব।

এশিয়ার দরিদ্রতম অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় একই সময়ে ১০১ জন শত কোটিপতির সম্পদ বেড়েছে ১৭৪ বিলিয়ন ডলার। করোনাকালে দরিদ্র হয়ে পড়া এ অঞ্চলের ৯ কোটি ৩০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে ১ হাজার ৮০০ ডলারের চেক দেওয়ার জন্য এই অর্থ যথেষ্ট।

এখন পর্যন্ত করোনার সর্বাধিক ধাক্কাটা পড়েছে নারীদের ওপর। বিশ্বজুড়ে কর্মজীবী নারীদের বেশিরভাগ অংশ অনিশ্চিত বা নিরাপত্তাহীন পেশায় যুক্ত। বেতনও তুলনামূলক কম পান তাঁরা। স্বাভাবিকভাবে এ ধাক্কা লেগেছে তাঁদেরই বেশি।

আর পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৬১০ জন শত কোটিপতির সম্পদ বেড়েছে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থ দিয়ে করোনাকালে দরিদ্র হয়ে পড়া এখানকার ৬ কোটি ৪০ লাখ লোকের সবাইকে ২০ হাজার ডলারের এক একটি চেক দেওয়া সম্ভব।

কোভিডের প্রভাবে সৃষ্ট মন্দা শীর্ষ ধনীদের জন্য এরই মধ্যে কেটে গেছে। এ মহামারি শুরুর পর বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্মিলিত সম্পদ বেড়েছে অর্ধট্রিলিয়ন (৫০ হাজার কোটি) ডলার। এই অর্থে সবাইকে করোনা টিকা দেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি এই মহামারির কারণে কাউকে দরিদ্র হতে হবে না—সে বিষয়টিও এই অর্থ দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব।

এই মহামারিতে বিশ্বে গত ৯০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থানের সংকট সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়েছে। বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন বা কাজের বাইরে রয়েছেন।

এখন পর্যন্ত করোনার সর্বাধিক ধাক্কাটা পড়েছে নারীদের ওপর। বিশ্বজুড়ে কর্মজীবী নারীদের বেশিরভাগ অংশ অনিশ্চিত বা নিরাপত্তাহীন পেশায় যুক্ত। বেতনও তুলনামূলক কম পান তাঁরা। স্বাভাবিকভাবে এ ধাক্কা লেগেছে তাঁদেরই বেশি। বিভিন্ন খাতে তাঁদের অবস্থান পুরুষের সমান হলে কোভিডের প্রভাবে ১১ কোটি ২০ লাখ নারীকে উপার্জন বা চাকরি হারানোর উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে হতো না। বিশ্বে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতে কর্মরত জনশক্তির প্রায় ৭০ শতাংশ নারীরা। কিন্তু প্রায়ই তাঁরা কম আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ অবস্থা তাঁদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।

করোনা মহামারি চলার মধ্যেই গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত এশিয়ায় ৭১১ জন শত কোটিপতির সম্পদ বেড়েছে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোভিড–১৯–এর প্রভাবে দরিদ্র হয়ে গেছেন এমন ১৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে এই অর্থ দিয়ে ৯ হাজার ডলারের এক একটি চেক দেওয়া সম্ভব।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর আমরা মানুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখেছি। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দেখা দেওয়া গভীর বিভক্তি ভাইরাসের মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।’ তিনি বলেন, চাতুর্যের অর্থনীতিতে সম্পদ দরিদ্রদের কাছ থেকে ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে, যাঁরা মহামারিতেও বিলাসী জীবন যাপন করছেন। অথচ এই সংকটকালে সম্মুখসারিতে অবস্থানকারী ব্যক্তি যেমন: দোকানের সহকারী, স্বাস্থ্যকর্মী, বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।

অন্যদিকে সংস্থাটির এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ল্যান মারকেডো বলেন, এ বৈষম্যের ভাইরাস থামাতে হবে! এশিয়ার দেশগুলোর সরকার করোনাভাইরাস, দারিদ্র ও অসমতা থেকে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে। একটি সুন্দর ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এশিয়ার মানুষকে অবশ্যই সংহতি ও সম্মিলিত কাজের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।