কোন দেশ, কেন সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করে

বিশ্বে সামরিক সরঞ্জাম আমদানির চিত্র গত পাঁচ বছরে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। বিশ্বজুড়ে সংঘাত, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও প্রতিরক্ষাসক্ষমতা জোরদারের চেষ্টায় সামরিক সরঞ্জাম আমদানির হার গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সুইডেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ২০২০-২৪ সালের বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে। নিচে সে তালিকার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

ইউক্রেন

ইউক্রেনের রণাঙ্গনে একটি সাঁজোয়াযান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশটির সেনাসদস্যরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এ সময় বিশ্বজুড়ে মোট আমদানি হওয়া অস্ত্রের ৮ দশমিক ৮ শতাংশই করেছে দেশটি। সেখানে সামরিক অস্ত্র আমদানি আগের পাঁচ বছরের তুলনায় শতগুণ বেড়েছে।

এসআইপিআরআই বলেছে, রাশিয়ার হামলার পর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউক্রেনকে অন্তত ৩৫টি দেশ অস্ত্র সরবরাহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করে। শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে জার্মানি ও পোল্যান্ড। যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও গোলাবারুদসহ নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে ইউক্রেন।

ভারত

ভারতের আমদানি করা যুদ্ধবিমান রাফাল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছে ভারত। ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আমদানি হওয়া অস্ত্রের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ করেছে ভারত। তবে আগের পাঁচ বছরের (২০১৫-১৯) তুলনায় আমদানি ৯ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এর কারণ, নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ।

যুদ্ধবিমান (সুখোই, রাফাল), সাবমেরিন, ট্যাংক ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে ভারত। দেশটিতে এখনো সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। এ ছাড়া ফ্রান্স, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র সরবরাহ করে।

কাতার

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা আমদানি করে কাতার
ফাইল ছবি: এএফপি

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট এই ধনী দেশ বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারী দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটির অস্ত্র আমদানি আগের পাঁচ বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানিতে দেশটির অংশীদারত্ব ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বাধিক অস্ত্র কেনে কাতার। এ ছাড়া ইতালি ও যুক্তরাজ্য থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র আসে। এফ-১৫ যুদ্ধবিমান, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও নৌসামগ্রীসহ বিভিন্ন অস্ত্র আমদানি করে দেশটি।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের অত্যাধুনিক ট্যাংক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশই করেছে সৌদি আরব। ইয়েমেনে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক হস্তক্ষেপ এবং ইরানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে সৌদি আরব প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয় করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র দেশটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও স্পেন এবং ফ্রান্স থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র আসে। সৌদি আরবের আমদানি করা প্রধান প্রধান অস্ত্রের মধ্যে আছে এফ-১৫ এসএ যুদ্ধবিমান, থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ড্রোন ও কামান।

পাকিস্তান

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ–১৬
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের আরেক বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ পাকিস্তান। ২০২০-২৪ সালে বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে দেশটি। চীন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। পাশাপাশি তুরস্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকেও আসে অস্ত্র। পাকিস্তান আমদানি করে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান, চীনা ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ।

জাপান

প্রথাগতভাবে প্রতিরক্ষায় সংযত হলেও জাপান গত পাঁচ বছর বড় অস্ত্র আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। এ সময় তারা বৈশ্বিক আমদানির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি এবং চীনের সামরিক উত্থান জাপানকে আরও সতর্ক করে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র জাপানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। যুক্তরাজ্য ও জার্মানিও উল্লেখযোগ্য অংশীদার। জাপানের প্রধান প্রধান আমদানি করা অস্ত্রের মধ্যে আছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা ও পি-৮ নজরদারি বিমান।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গত পাঁচ বছরে অস্ত্র আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২০-২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র আমদানির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে দেশটি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও নরওয়ে। মূলত সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান, রাডার সিস্টেম ও ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি করে অস্ট্রেলিয়া।

মিসর

উত্তর আফ্রিকার দেশ মিসর অস্ত্র আমদানিতে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ৩ দশমিক ৩ শতাংশের অংশীদার তারা। দেশটি জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করে। দেশটির আমদানি করা প্রধান প্রধান অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ফ্রিগেট, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক যুক্তরাষ্ট্র নিজেও অস্ত্র আমদানি করে। বিশ্বজুড়ে অস্ত্র আমদানির ৩ দশমিক ১ শতাংশ করে দেশটি। এফ-৩৫ ও অন্যান্য প্রযুক্তির উন্নয়নে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইসরায়েল থেকে বিশেষ সরঞ্জাম কেনে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া পরীক্ষামূলক অস্ত্রপ্রযুক্তিও আমদানি করে তারা।

কুয়েত

বিশ্বজুড়ে অস্ত্র আমদানির ৩ দশমিক ১ শতাংশ আমদানি করে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও ফ্রান্স থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে। কুয়েত মূলত যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও গোলাবারুদ আমদানি করে।