অপারেশন ১০২৭: মিয়ানমারে চীনের অবস্থান বদল

সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে কাচিন-কারেন-চিন-রাখাইনদের পাশাপাশি গণতন্ত্রপন্থী সু চি–সমর্থক বামারদের একাংশ ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ বা ‘পিডিএফ’ নামে যুক্ত হয়। চীন আকস্মিক অবস্থান বদল করে গেরিলা গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। ওয়াশিংটনকে মিয়ানমারের বিষয় থেকে দূরে রাখা তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

মিয়ানমারের ককাং অঞ্চলে অস্ত্র হাতে পাহারায় এক বিদ্রোহী যোদ্ধা। ১০ নভেম্বর
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের দিক থেকে বাংলায় ঐতিহাসিকভাবে কেবল গোলাগুলির খবরই এসেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে জাপানিদের সঙ্গে বামারদের যুদ্ধের খবর আসত, যে যুদ্ধ বাংলায় ‘পঞ্চাশের মন্বন্তরের’ জন্ম দেয়। এরপর নিয়মিত আসত রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের ওপর জুলুমের খবর। তবে এখন যে গৃহযুদ্ধের খবর আসছে, সেটা এত দিনের ইতিহাসের চেয়ে তাৎপর্যে আলাদা। এ খবর অনেক বেশি জটিল পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছে এবং নিশ্চিতভাবে অতীতের মতো মিয়ানমারের এবারের ঘটনাবলিও বাংলার দিকে প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরের লেনদেনে এই যুদ্ধের প্রবল ছাপ পড়েছে।

গৃহযুদ্ধে ভূরাজনীতির গভীর মিশ্রণ

যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধ কোনোটাই মিয়ানমারে নতুন নয়। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের কুলীন সমাজ যেভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পেয়েছে, রেঙ্গুনে ব্যাপারটা সেভাবে ঘটেনি। তাদের স্বাধীনতা এসেছিল দুই বড় শক্তি জাপান ও ব্রিটেনের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের শেষে। তখন বিদেশি আগ্রাসন তাড়াতে বামাররা সঙ্গে পেয়েছিল কাচিন, কারেন, চিন, রাখাইনসহ ‘ব্রিটিশ-বার্মা’র ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠীকে। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি স্বাধীনতার প্রথম দিন থেকে নতুন করে যুদ্ধ বাধে এবং তার সমীকরণও পাল্টে যায়।

কথা ছিল, বামাররা ‘ছোট ছোট’ জাতিগোষ্ঠীকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে ‘বার্মা’কে ফেডারেল ইউনিয়ন আকারে গড়ে তুলবে। কিন্তু বামার জেনারেলরা সেটা হতে দিলেন না। প্রথমে বিদ্রোহ করল কারেনরা। তারপর বাকিরাও। ৭৫ বছর ধরে দেশটিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের সেসব আঞ্চলিক যুদ্ধ চলছিল। ২০২১ সালে যখন অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করেন বামার জেনারেলরা নিজ জাতির রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নেন, তখন থেকে ওই যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। বামারদের মধ্যে তখন বড় আকারে ভাঙন ধরে।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারের ইতিহাসের তৃতীয় পর্যায়ের এই গৃহযুদ্ধে বামারদের সশস্ত্র বাহিনী তাতমাদোর বিরুদ্ধে কাচিন-কারেন-চিন-রাখাইনদের পাশাপাশি গণতন্ত্রপন্থী সু চি সমর্থক বামারদের একাংশ এসে যুক্ত হয় ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ বা ‘পিডিএফ’ নামে।

এতে এত দিনের আঞ্চলিক যুদ্ধ খোদ কেন্দ্রীয় মিয়ানমারের বামার এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এ মুহূর্তে মিয়ানমারজুড়ে তাতমাদোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধীদের সেই যুদ্ধেরই খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে এই গৃহযুদ্ধের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে ভূরাজনীতির গভীর মিশ্রণ।

চীনের ভূমিকা বদল

বর্তমান বিশ্বে মিয়ানমার হলো একমাত্র দেশ, যেখানে হাজার হাজার শিশুর জন্ম হয় গেরিলা মা–বাবার পরিবারে। মারাও যায় তারা গেরিলা জীবন শেষে। কাচিন, কারেন, শান ও চিনদের এলাকায় সে রকমই চলছে। এসব এলাকায় যুদ্ধের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, তাতমাদো কখনো গেরিলাদের নির্মূল করতে পারেনি। গেরিলা দলগুলোও একসঙ্গে জোট বেঁধে রাজধানীতে যেতে পারেনি। পরস্পরকে হারাতে না পেরে দুই পক্ষের আপাত একটা সহাবস্থান চলছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলা গোষ্ঠীগুলো সমন্বিতভাবে তাতমাদোর অবস্থানে একযোগে হামলা শুরু করেছে এবং তাতে বামার সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। মিয়ানমারের ইতিহাসে আঞ্চলিক গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এরকম সমন্বয় এই প্রথম। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, যুদ্ধে গেরিলা দলগুলোকে চীন মদদ দিচ্ছে বলে বিশ্বাসযোগ্য খবর আসছে।

অথচ চীনকে এত দিন তাতমাদোর ‘সব মৌসুমের পরীক্ষিত বন্ধু’ হিসেবে দেশে-বিদেশে মনে করা হতো। ঠিক এখানে এসেই মিয়ানমারের চলতি গৃহযুদ্ধের এ সপ্তাহের ঘটনাবলি বুঝতে অনেকে ভুল করছেন।

বেইজিংয়ের সবুজ সংকেতে ‘অপারেশন ১০২৭’

২০২১ সালের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, চীন একদিকে কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীকে যেমন সব উপায়ে সহায়তা দিয়েছে, তেমনি অনেক আঞ্চলিক গেরিলা দলের অস্ত্রশস্ত্রের উৎসও ছিল তারাই। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মিয়ানমার থেকে নিরন্তর সুবিধা নিতে যুদ্ধরত দুই পক্ষকে এভাবে হাতে রাখার কৌশল নেয় তারা। গেরিলা দলগুলোও জানে, এটা তাতমাদোরও অজানা নেই।

এর মধ্যে কেবল কারেন ও চিন প্রদেশের গেরিলা দলগুলো ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বেসামরিক সহায়তা আসছে। অং সান সু চির দলের পিডিএফ যখন ২০২২ থেকে গেরিলাযুদ্ধে নামে, তখন তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নানা সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। এভাবেই মিয়ানমারের তৃতীয় পর্যায়ের গৃহযুদ্ধে চীনের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোরও অন্তর্ভুক্তি ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ পাস হয় এবং তাতমাদোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে।

আরও পড়ুন

গত দুই বছরে মিয়ানমারে মাঠপর্যায়ে মৃদু চালে ওয়াশিংটনের এই অগ্রযাত্রা দেখে গণচীন সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে তার অবস্থান বদলে ফেলেছে। তাতমাদোর বিরুদ্ধে গেরিলা দলগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে বেইজিং নিজে থেকে তাদের দিকে বাড়তি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশের বড় প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন মোটাদাগে ইন্ধন পেয়ে কয়েকটি গেরিলা দল ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে জোট গড়ে ২৭ অক্টোবর থেকে অনেক প্রদেশে তাতমাদোর সেনা চৌকিগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। হামলার দিনকে স্মরণীয় রাখতে তারা অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’।

এই লেখা তৈরির সময়ও অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় জান্তার সৈনিকদের প্রায় পৌনে দুই শ সামরিক স্থাপনা দখল করেছে। ব্রাদারহুড আগামীকাল তাদের অভিযানের এক মাস পূর্তি শেষে প্রতিরোধযুদ্ধকে ‘নতুন উচ্চতা’য় নেবে বলে জানাল।

শুরুতে ‘অপারেশন ১০২৭’-এ যুক্ত ছিল আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ) এবং তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। এমএনডিএ হচ্ছে জাতিগত ককাংদের গেরিলা বাহিনী। ককাং ও তাঙদের প্রভাবিত এলাকা হলো দেশটির উত্তর-পূর্বে চীন লাগোয়া। চীনের ইউনানের সঙ্গে তাদের আর্থসামাজিক যোগাযোগ রয়েছে। এসব এলাকার মালিক কাগজপত্রে মিয়ানমার হলেও এখানে অর্থনীতি ও সমাজ জীবন চীন–প্রভাবিত। তবে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের রাখাইন, তাঙ ও ককাংদের সহযোগী শক্তি হিসেবে আছে দেশের একদম উল্টো দিকের চিন ও কাচিন প্রদেশের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি।

ব্রাদারহুডের ‘১০২৭’ অভিযান শুরুর পরেই চিন, কাচিন ও কারেনরা যার যার এলাকায় সশস্ত্র তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মিয়ানমারে সু চিপন্থী বামারদের পিডিএফগুলোও এই সম্মিলিত যুদ্ধে যুক্ত হয়। অর্থাৎ গণচীনের সবুজ সংকেতে মাত্র এক মাসে পুরো দেশে যুদ্ধ ময়দানের চেহারা অনেকখানি বদলে গেছে। স্বভাবত প্রশ্ন উঠেছে, চীন কেন এ রকম একটা কাণ্ড ঘটাল? যুদ্ধ ময়দান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে রাখতেই কি তারা এটা করল? সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী কৌশল নিচ্ছে?

অ-বামারদের পরিসর বাড়ল

যত দূর দেখা যাচ্ছে, চীন মিয়ানমারের গেরিলা দলগুলোকে বেশি সহায়তার মাধ্যমে অনেক লক্ষ্য হাসিল করছে। প্রথমত, কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের ভেতরে চীনা নাগরিকদের বড় একটি অপরাধ চক্র গড়ে উঠেছিল। এরা মিয়ানমারে থেকে চীনের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করত। তাতমাদোর জেনারেলরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। বামার জেনারেলদের দিয়ে চীন এসব অপরাধীকে থামাতে পারছিল না। এখন আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের সমঝোতা হয়েছে। এ কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পুরোটাই পাল্টে ফেলতে চাইছে বেইজিং।

দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের গেরিলা দলগুলোকে ব্যবহার করে দেশটিতে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকেও থামাতে চাইছে চীন। এই দুই অর্জনের স্বাভাবিক পার্শ্বফল হিসেবে ওয়াশিংটনকেও তারা মিয়ানমার বিষয়ে কিছুটা দূরে রাখতে পারছে। এগুলো হচ্ছে ‘অপারেশন ১০২৭’-এর তাৎক্ষণিক ফল। এতে মিয়ানমারের সামরিক ও আর্থসামাজিক দৃশ্যপটে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে অ-বামার গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব অনেকটা বেড়ে গেছে। এক মাসে তাতমাদোর বিপুল অস্ত্রসম্পদ গেরিলাদের হাতে এসেছে। এতে তাদের ‘আয়–রোজগার’ এবং জনবলও বেড়ে যাবে। উল্টো দিকে দেশের প্রধান প্রধান শহরে তাতমাদোর প্রভাবের পরিসর সীমিত হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন

ঝুঁকিতে মিন অং হ্লাইং

গেরিলা শিবিরে আপাত উল্লাস এবং বিপুল আশাবাদ সত্ত্বেও চীন হয়তো তাতমাদোর আর শক্তিক্ষয় চাইবে না; বরং এ অবস্থায় আটকে এই বাহিনীকে তাদের ওপর আরও নির্ভরশীল করে রাখতে চাইবে।

চলতি অপমানকর অবস্থা থেকে বের হতে তাতমাদোর সামনে আপাতত যেসব উপায় আছে, সেগুলোর কোনোটাই সুখকর নয়। প্রথম বিকল্প মিয়ানমারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সরিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয় বিকল্প, এনএলডির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করা এবং শেষ বিকল্প নিজেদের কেবল নেপিডো, মান্দালে, রেঙ্গুনের মতো কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আটকে রাখা। নেপিডোতে গত কয়েক দিন তাতমাদোর ঘনিষ্ঠ বামার ভিক্ষু দল চীনবিরোধী বিক্ষোভ করেছে, যা এতদিনের মুরব্বিকে নিয়ে তাদের হতাশার সাক্ষ্য দিচ্ছে। ওয়াশিংটনের জন্য নেপিডোর এসব বিক্ষোভ নিশ্চিতভাবে উৎসাহব্যঞ্জক।

তা ছাড়া কারেন, চিন ও কাচিন গেরিলাদের প্রভাবের পরিসর বাড়তে থাকায় গণতন্ত্রপন্থী বামার পিডিএফগুলোর প্রশিক্ষণ এবং বিচরণ এলাকাও বাড়বে। পশ্চিমের জন্য সেটিও সুসংবাদ।

যদিও তাতমাদোর চলতি ক্ষয়ক্ষতি প্রধানত আঞ্চলিক গেরিলা দলগুলোর হাতে ঘটেছে, তবু এতে ক্ষমতাচ্যুত এনএলডির আত্মগোপনে থাকা কর্মীদের মনোবল অনেক বাড়াবে। তবে চীনকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশলে ওয়াশিংটন সহজে যে সফল হতে পারছে না, সেটিও দেখা গেল এবার।

বরং ‘১০২৭’ অভিযানের পর অনেক সীমান্ত এলাকায় চীনের সঙ্গে তাতমাদোর বিরোধী যোদ্ধাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ল। চীন চাইলে যে মিয়ানমারের ভেতরে তাৎক্ষণিক অনেক কিছু করতে পারে—রাখাইন, তাঙ ও ককাংদের অভিযানে সেটাই দেখল ওয়াশিংটন।

তবে সর্বশেষ শান প্রদেশ সংলগ্ন চীন সীমান্তে বেইজিংয়ের কয়েকটি সামরিক যানে রহস্যময় আগুন লাগার পর মনে হচ্ছে, মিয়ানমারের কোন কোন গেরিলা দল গোপনে চীনকেও লক্ষ্যবস্তু করে থাকতে পারে।

গভীর এক কৌশলগত বিড়ম্বনায় ভারত

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েনের মধ্যে মিয়ানমারের চলতি পরিস্থিতিতে আপাতদৃষ্টে ভারতকে বেশি ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ মনে হচ্ছে। রাখাইনে ও চিন প্রদেশে আরাকান আর্মি এবং চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের শক্তি বৃদ্ধি ভারতের জন্য বহুবিধ উদ্বেগ তৈরি করেছে। এতে আরাকানে তাদের বিপুল বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’য় আসতে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের শক্তি বৃদ্ধি তাদের ‘লুক-ইস্ট’ নীতিকে হুমকিতে ফেলেছে। মিজোরাম ও চিনের ওপর দিয়ে আসিয়ানমুখী নয়াদিল্লির সব নীতি-কৌশল কিছুটা হলেও এখন মণিপুরের কুকিদের সদয় আচরণের ওপরও অনেকখানি নির্ভর করবে। কারণ, মিজো-চিন-কুকি বৃহত্তর জো জনগোষ্ঠীর নানান উপশাখা মাত্র।

আরও পড়ুন

ভারত এত দিন যে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের সংগ্রাম থেকে মুখ সরিয়ে জান্তামুখী হয়ে বসে ছিল, সে নীতি পরিবর্তনের তাগিদ তৈরি করল ‘অপারেশন ১০২৭’। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের যতগুলো সীমান্ত শহর আছে, তার প্রায় সবই এখন চিন ন্যাশনাল আর্মির দখলে।

এর মধ্যে গতকাল মিয়ানমারের ভেতরে গোপনে থাকা মেইতেই গেরিলা দল ইউএনএলএফের একটা সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। এটা যে মণিপুরে কুকিবিরোধী মেইতেইদের প্রতি একটা স্পষ্ট সামরিক বার্তা, সেটি সবাই বুঝতে পারছে। এ ছাড়া যেসব ভারতীয় গেরিলাদল এত দিন মিয়ানমারের জান্তাকে সহযোগিতা করেছে, তাদের এখন দ্রুত আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে যেতে হচ্ছে।

মিয়ানমারের গেরিলা দলগুলোর চলতি অভিযান থেকে বাংলাদেশের জন্যও দুটি বার্তা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরানোর আলাপ-আলোচনায় আরাকান আর্মির ছায়া নিশ্চিতভাবে আরও গভীর হলো। মিয়ানমারের গেরিলা জোটগুলোর প্রতি উদাসীন থাকার নীতিও হয়তো ঢাকাকে বদলাতে হতে পারে।

আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক