রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা, চীনকে সতর্ক

জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ ছাড়া চীনকে সামরিকীকরণের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

জাপানের হিরোশিমায় আয়োজিত সম্মেলনে জি-৭জোটভুক্ত দেশের নেতারা। ১৯ মে
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে জি-৭ সম্মেলনে হাজির হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার জাপানের হিরোশিমায় চলমান তিন দিনের এ সম্মেলনে হাজির হন তিনি। ৪৯তম সম্মেলন শেষ হচ্ছে রোববার। এবারের সম্মেলনে জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ ছাড়া চীনকে সামরিকীকরণের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়েও ইচ্ছা পোষণ করেছেন জি-৭ নেতারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতার শিকার হয়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহর। সেই শহরে গত শুক্রবার সকালে শুরু হয়েছে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে আরও যোগ দিয়েছেন জি-৭-এর আউটরিচ নামে পরিচিত আরও আট দেশের নেতারা। এই তালিকায় রয়েছে ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ।

এবারের জি-৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেন ইস্যু। তাঁরা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের ধারণা বাস্তবায়নে তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বকে নতুন করে পরমাণু ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য আবারও রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও কানাডা ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং চীন নিয়ে যে উদ্বেগে পড়েছে, তার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের সম্মেলনে। চীন ঘিরে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও তাইওয়ান ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।

সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে মূল্যবান ধাতব পদার্থের সরবরাহব্যবস্থার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা নিয়ে বেশি উদ্বেগে রয়েছে চীন। জি-৭-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে ভবিষ্যতের লেনদেন নিয়ে একটি সাধারণ কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এই কৌশল জি-৭ভুক্ত সব দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।

জি-৭ নেতাদের দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করতে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া দ্রুত শর্তহীনভাবে ইউক্রেন থেকে সম্পূর্ণ রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

জি-৭ নেতারা সতর্ক করে বলেন, যেসব দেশ বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে, তাদের ফল ভোগ করতে হবে। এ সতর্কবার্তা মূলত বেইজিংয়ের প্রতি। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, অর্থনৈতিক নিপীড়ন চর্চা করে থাকে বেইজিং।

ফ্রান্স সরকারের এক উড়োজাহাজে জেলেনস্কি জাপানে পৌঁছানোর পর জি-৭-এর বিবৃতি দেওয়া হয়। জেলেনস্কি টুইট করে বলেন, ‘সহযোগী ও ইউক্রেনের বন্ধুদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় হাজির হয়েছি।’

সামরিকীকরণ নিয়ে চীনকে সতর্ক

হিরোশিমায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে জারি করা চূড়ান্ত ঘোষণায় দেশগুলো চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেইজিংয়ের সামরিকীকরণ কার্যক্রম নিয়ে সতর্ক করেছেন তাঁরা। তবে একই সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে আলোচনার দরজা খোলা আছে বলেও জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চীনের সঙ্গে গঠনমূলক এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত।’ একই সঙ্গে চীনের সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনকে যদি এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হয়, তবে তা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কাছে আধুনিক যুদ্ধবিমান চেয়েছে ইউক্রেন। তবে কোনো দেশের কাছ থেকে এখনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পায়নি কিয়েভ। শুক্রবার জি-৭ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-৭ নেতাদের ইউক্রেনের পাইলটদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি সমর্থনের কথা বলেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে প্রথম বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাপানের হিরোশিমায় শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭-এর সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল তাঁরা বৈঠক করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই তাঁদের প্রথম সরাসরি বৈঠক। বৈঠক শেষে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান এ যুদ্ধ শুধু অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির বিষয় নয়, এটা মানবতার ইস্যু।’ একই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে যতটা সাধ্য আছে, তার সবটুকুই করবে ভারত।