বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী কুকুরের ‘অলৌকিক’ জীবনকাহিনি

বৃহস্পতিবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ববিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সবচেয়ে বেশি বয়সী কুকুর ঘোষণা করেছে
ছবি: রয়টার্স

পর্তুগালের মধ্যাঞ্চলীয় এলাকার ছোট্ট গ্রাম কনকেইরোসের বাসিন্দা লিওনেল কস্তার খুব আদরের কুকুর ববি। কুকুরটির জন্ম তিন দশক আগে। তখন কস্তার বয়স ছিল মাত্র আট বছর। তখন থেকে ৩০ বছর ধরে ববিকে আগলে রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি কস্তার আদরের সে কুকুরটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী কুকুরের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

ববি রাফেইরো দো আলেনতেজো জাতের কুকুর। গত বছর তার ৩০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন হয়েছে। ততক্ষণে কস্তা জেনে গেছেন, ববি বয়সের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী কুকুরের রেকর্ডটি ভেঙে ফেলেছে। প্রায় এক শতক ধরে রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার একটি কুকুরের দখলে ছিল। ১৯৩৯ সালে ২৯ বছর ৫ মাস বয়সে কুকুরটি মারা যায়। এরপর এত দিন আর কোনো কুকুরকে এত বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচতে দেখা যায়নি।

গত বছর থেকেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন কস্তা। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রও জমা দেন। এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ববিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সবচেয়ে বেশি বয়সী কুকুর ঘোষণা করেছে। এদিন গিনেস কর্তৃপক্ষ বলেছে, ববির জীবনকাহিনি ‘অলৌকিক’।

গতকাল শনিবার ববির বয়স হয়েছে ৩০ বছর ২৬৯ দিন।
কস্তার বাবা একজন শিকারি। ববির জন্মের সময়ে কস্তার পরিবারে অনেকগুলো জীবজন্তু ছিল। কিন্তু সেগুলো পোষার মতো যথেষ্ট অর্থ কস্তার বাবার কাছে ছিল না। এ কারণে নতুন করে কোনো কুকুরের বাচ্চা জন্ম নিলে সেগুলোকে সাধারণত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন তিনি। তবে ববি একটি কাঠের স্তূপের নিচে লুকিয়ে থাকায় সে প্রাণে বেঁচে যায়। কস্তা এবং তাঁর ভাইবোনেরা কয়েক দিন পর তাকে সেখানে খুঁজে পান। কুকুরছানাটি চোখ খুলতে না পারা পর্যন্ত তাঁরা এটিকে লুকিয়ে রাখে।

সে সময়ের কথা স্মরণ করে কস্তা বলেন, ‘আমরা জানতাম, ও একবার চোখ খুললে আমার মা-বাবা তাকে পুঁতে ফেলতে পারবে না।

ববির সঙ্গে হাঁটছেন লিওনেল কস্তা
ছবি: রয়টার্স

পর্তুগালের কনকেইরোস গ্রামে একটি গির্জার কাছে ববিকে লালন-পালন করেন কস্তা। ববির গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো প্রসঙ্গে ৩৮ বছর বয়সী কস্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা কতটা গর্বের তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। কেউ কেউ আমাদের বলেছিল আমরা এটা পারব না। তবে আমরা ববির বয়স জানতাম। নিশ্চিত ছিলাম আমরা যা জানি, তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে।’

ববি যে জাতের কুকুর, তারা সাধারণত ১২ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সে তুলনায় দ্বিগুণ আয়ু পেয়েছে ববি। কস্তার ধারণা, শান্ত পরিবেশে বসবাস, কখনো শিকলবন্দী না থাকা, শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন এবং মানুষের মতো খাবার গ্রহণের কারণে ববি বেশি আয়ু পেয়েছে। তা ছাড়া ববি তাঁদের সবার কাছ থেকে যে পরিমাণ আদর-ভালোবাসা পেয়েছে, তা–ও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।

বয়সের ভারে ববির চাঞ্চল্য এখন অনেকটাই কমে গেছে। তার শরীরের পশমগুলো পাতলা হয়ে গেছে, দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি করে বিশ্রাম নিতে হয় তাকে। তবে ববি এখনো হাঁটতে ভালোবাসে।

কস্তার আশা, ববি আরও বেশি বছর বেঁচে থাকবে। তিনি বলেন, এখানে অনেক প্রাণী আছে, যারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছে। তবে ববি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।

কুকুরটির কারণে দুর্গম গ্রাম কনকেইরোসের নামটি পরিচিতি পাওয়ায় কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন কস্তা।