বিশ্বে পাল্লা দিয়ে হচ্ছে আকাশচুম্বী ভবন, কোনটি কত উঁচু

বিশ্বজুড়ে চলছে ‘আকাশ ছোঁয়া’র প্রতিযোগিতা। আধুনিক প্রযুক্তি আর সাহসী স্থাপত্যচিন্তার মেলবন্ধনে একের পর এক গড়ে উঠছে অসাধারণ সব উঁচু ভবন। উচ্চতা, নকশা আর প্রযুক্তির দিক থেকে এগুলোর একটি যেন আরেকটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব থেকে চীন, দুবাই থেকে ব্রাজিল—নানা দেশে, নানা স্থানে এখন চমকে দেওয়ার মতো সব ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। বিশ্বে নির্মাণাধীন ১০ উঁচু ভবন নিয়ে গত মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক গালফ টাইমস। নির্মাণাধীন এসব উঁচু ভবন নিয়ে নানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক

জেদ্দা টাওয়ার

জেদ্দা টাওয়ার
ছবি: আড্রিয়ান স্মিথ প্লাস গর্ডন গিল আর্কিটেকচার

এটি হবে বিশ্বের প্রথম ভবন, যার উচ্চতা এক কিলোমিটারের বেশি। সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে ‘কিংডম সিটি’ নামে নতুন শহর গড়ে তুলছে জেদ্দা ইকোনমিক কোম্পানি। এ প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জেদ্দা টাওয়ার। ভবনটির নকশা করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আড্রিয়ান স্মিথ প্লাস গর্ডন গিল আর্কিটেকচার। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের এখনকার সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফারও নকশা করেছে। জেদ্দা টাওয়ারের গঠন তিনটি পাপড়ির মতো। এটি এমনভাবে তৈরি হচ্ছে যেন বাতাসের চাপ সহজে সহ্য করতে পারে। ভবনটিতে ১৬৭টির বেশি তলা থাকবে।

বুর্জ আজিজি

বুর্জ আজিজি
ছবি: বুর্জ আজিজির ওয়েবসাইট

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে উঁচু এ ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এর আগের নাম ছিল ‘এনতিসার টাওয়ার’। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালে ‘আজিজি ডেভেলপমেন্ট’ এটিকে গ্রহণ করে। ২০২৫ সালে কাজ আবার শুরু হয়। ২০২৮ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। দুবাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেমন দুবাই মল ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাছে এটির অবস্থান। এর পরিকল্পিত উচ্চতা ৭২৫ মিটার। অর্থাৎ এখনকার সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার পরই এর অবস্থান।

গোল্ডিন ফিন্যান্স ১১৭

চীনের এ ভবনকে একসময় ‘সবচেয়ে উঁচু পরিত্যক্ত ভবন’ বলা হতো। ২০০৮ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে ২০১৫ সালে দেশটির শেয়ারবাজার ধসের কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক বছর এটি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি ভবনটির নির্মাণ আবার শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ হবে। চীনের তিয়ানজিনে নির্মাণাধীন এই ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯৭ মিটার।

বুর্জ বিংঘাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো রেসিডেন্স

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিজনেস বে এলাকায় নির্মিত হচ্ছে এ ভবন। এটি তৈরি করছে বিংঘাতি প্রপার্টিজ ও ঘড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জ্যাকব অ্যান্ড কো মিলে। নির্মাণ শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আবাসিক ভবন। এতে থাকবে স্কাই ম্যানশন, বিলাসবহুল পেন্টহাউস, ব্যক্তিগত ফিটনেস ক্লাব, স্পা ও বাগান। ভবনের মোট তলা হবে ১০৪টি। এ ছাড়া আরও ৭টি বেজমেন্ট লেভেল থাকবে। ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯৫ মিটার।

সেনা টাওয়ার

ব্রাজিলে নির্মাণাধীন সেনা টাওয়ারের নামকরণ করা হয়েছে কিংবদন্তি ফর্মুলা ওয়ান রেসার আয়রটন সেনার নামে
ছবি: এফজি এমপ্রেনডিমেন্টোস

ব্রাজিলে নির্মাণাধীন এ ভবনের নামকরণ করা হয়েছে কিংবদন্তি ফর্মুলা ওয়ান রেসার আয়রটন সেনার নামে। ভবনটি তৈরি করছে ব্রাজিলের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান এফজি এমপ্রেনডিমেন্টোস। এতে বিনিয়োগ করছেন খুচরা পণ্যের ধনকুবের লুসিয়ানো হ্যাং। প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ভবনের নকশা করেছেন আয়রটন সেনার বোনের মেয়ে লালালি সেনা। ২০২৫ সালে ভবনটির নির্মাণ শুরু হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভবনটি প্রস্তুত হওয়ার কথা। নকশা অনুযায়ী এটির উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৪ মিটার।

টাইগার স্কাই টাওয়ার

আরব আমিরাতের দুবাইয়ে উঁচু এ ভবনের অবস্থান। প্রকল্পের নকশা করেছে আমিরাতভিত্তিক খ্যাতনামা স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো। ভবনটিতে থাকবে বিশ্বের সর্বোচ্চ ইনফিনিটি পুল, সবচেয়ে উঁচু রেস্তোরাঁ ও এক টুকরা সবুজ বন। টাইগার প্রপার্টিজের নামানুসারে এ ভবনের নাম রাখা হয়েছে ‘টাইগার স্কাই টাওয়ার’।

ভবনটির বাইরের অংশ থাকবে কাচে মোড়া, যার সঙ্গে থাকবে ধাতব ছায়া ঢাল। ভবনের চূড়ায় থাকবে একটি ছাদবাগান। ভবনের খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। ভবনটির নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের মে মাসে। ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে এটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা।

সিক্স সেন্সেস রেসিডেন্স, দুবাই মারিনা

আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মারিনা এলাকায় ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। মূলত ‘পেন্টোমিনিয়াম’ নামে ২০০৭ সালে এ ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। পরে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালে আবার নতুন নামে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ভবনটিতে থাকবে ১২২টি তলা ও মোট ২৫১টি আবাসিক ইউনিট। এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু একক আবাসিক ভবন। ২০২৮ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা।

দ্য লাইন

দ্য লাইন শহরের নকশা তৈরি হয়েছে দুটি আয়নার মতো সুউচ্চ ভবন নিয়ে, যেগুলোর মাঝখানে থাকবে একটি খোলা জায়গা
ফাইল ছবি: এএফপি

‘দ্য লাইন’ নামের প্রকল্পটি অন্য সব নির্মাণাধীন উঁচু ভবনের চেয়ে একেবারেই আলাদা। এটি হবে ১৭০ কিলোমিটার লম্বা, ৫০০ মিটার উঁচু ও ২০০ মিটার চওড়া। এটি মূলত একটি দীর্ঘ, সরলরেখা আকৃতির ভবনসদৃশ শহর। সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠছে এই মহাপ্রকল্প। দ্য লাইন শহরের নকশা তৈরি হয়েছে দুটি আয়নার মতো সুউচ্চ ভবন নিয়ে, যেগুলোর মাঝখানে থাকবে একটি খোলা জায়গা।

‘দ্য লাইন’ প্রকল্পটি পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি হচ্ছে। এখানে গাড়ি, রাস্তা বা কার্বন নিঃসরণ—কিছুই থাকবে না। পুরো শহর চলবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

হেক্সি ইউজুই টাওয়ার এ

চীনের নানজিং শহরে নির্মিত হচ্ছে হেক্সি ইউজুই টাওয়ার। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে শহরটির অন্যতম উঁচু ভবন। চীনের ইয়াংসি নদীর তীরে হেক্সি ইউজুই এলাকার নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠছে ভবনটি। এটি নানজিং শহরের এক নতুন বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবনের নকশা করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আড্রিয়ান স্মিথ প্লাস গর্ডন গিল আর্কিটেকচার। ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। ২০২৮ সালে এর নির্মাণ শেষ হবে। ভবনটির উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯৮ দশমিক ৮ মিটার।

১০

পান্ডা টাওয়ার (তিয়ানফু সেন্টার)

চীনের চেংদু শহরে নির্মিত হচ্ছে পান্ডা টাওয়ার। এর আনুষ্ঠানিক নাম তিয়ানফু সেন্টার। তিয়ানফু অ্যাভিনিউ সাউথ এলাকায় এ ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এর নকশা করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান কোহন পেডারসন ফক্স অ্যাসোসিয়েটস। সিচুয়ান প্রদেশের পাহাড়ি দৃশ্যের অনুপ্রেরণায় ভবনটির নকশা করা হয়েছে। এর মাঝখানে এমন ফাঁকা জায়গা থাকবে, যেখান দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারবে। এখানে অফিস, আবাসিক ইউনিট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ২০২১ সালে এ ভবনের নির্মাণ শুরু হয়। ২০২৭ সালে এর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। এর উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮৯ মিটার।