বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার চারটিই মধ্যপ্রাচ্যের

বিশ্বের কোন দেশের মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী—জানার কৌতূহল আছে অনেকেরই। সাধারণত মার্কিন ডলারের বিপরীতে কোনো দেশের মুদ্রার বিনিময় হার ধরে বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী ১০টি মুদ্রার একটি তালিকা করেছে। শীর্ষ এই ১০ মুদ্রা নিয়ে এবারের আয়োজন।

কুয়েতি দিনার

কুয়েতি দিনার সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা কুয়েতি দিনার। এক কুয়েতি দিনারে ৩ দশমিক ২৬ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৯৭ টাকা। অন্যভাবে বললে, এক মার্কিন ডলারের মূল্য শূন্য দশমিক ৩১ কুয়েতি দিনার।

সৌদি আরব ও ইরাকের মাঝামাঝি অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি কুয়েত। তেল রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করছে দেশটি।

বাহরাইনি দিনার

বাহরাইনি দিনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী মুদ্রা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

শক্তিশালী মুদ্রার দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ বাহরাইন। সৌদি আরবের উপকূলের কাছে অবস্থিত দেশটির মুদ্রার নাম বাহরাইনি দিনার। বর্তমানে এক বাহরাইনি দিনারের মূল্য ২ দশমিক ৬৫ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলারের সমান শূন্য দশমিক ৩৮ বাহরাইনি দিনার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩২২ টাকা।

উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম বহুমুখী অর্থনীতির দেশ বাহরাইন। ২০২৪ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) তেল খাতের বাইরের অবদান দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

ওমানি রিয়াল

শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ওমানি রিয়াল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমানের রিয়াল। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনের মাঝামাঝি ওমান অবস্থিত। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ধনী প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো ওমানও তেল ও গ্যাসের বড় রপ্তানিকারক।

১৯৭০-এর দশকে ওমানি রিয়াল চালু হয়। বর্তমানে এক ওমানি রিয়ালের মূল্য ২ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার সমান শূন্য দশমিক ৩৮ ওমানি রিয়াল। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩১৬ টাকা।

জর্ডানি দিনার

জর্ডানের মুদ্রা চতুর্থ শক্তিশালী মুদ্রা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে জর্ডানের নাম বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। ইসরায়েলের প্রতিবেশী মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের মুদ্রা বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী।

জর্ডানের মুদ্রার নাম জর্ডানি দিনার। ১৯৫০-এর দশকে এ মুদ্রার প্রচলন হয়। বর্তমানে এক দিনারের মূল্য ১ দশমিক ৪১ মার্কিন ডলার। এক মার্কিন ডলারে পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ৭১ জর্ডানি দিনার। বাংলাদেশি টাকায় ১৭১ টাকা।

জর্ডান মূলত স্থলবেষ্টিত দেশ। প্রতিবেশীদের তুলনায় তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর কম নির্ভরশীল তারা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ঋণ বৃদ্ধি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ব্রিটিশ পাউন্ড

ব্রিটিশ পাউন্ডের অবস্থান পঞ্চম
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের মুদ্রা ব্রিটিশ পাউন্ডের অবস্থান পঞ্চম। ১৫ শতাব্দী থেকে এ মুদ্রা প্রচলিত আছে। বর্তমানে এক পাউন্ডের মূল্য ১ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার সমান শূন্য দশমিক ৭৫ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬১ টাকা।

জিব্রাল্টার পাউন্ড

ব্রিটিশ পাউন্ডের পরের অবস্থানে জিব্রাল্টার পাউন্ড
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ব্রিটিশ পাউন্ডের পরের অবস্থানে রয়েছে জিব্রাল্টার পাউন্ড। ১৯২০-এর দশকে চালু হওয়া এ মুদ্রার মান ব্রিটিশ পাউন্ডের সঙ্গে বাঁধা। ফলে এটি সব সময় পাউন্ডের দরের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তবে ১ জিব্রাল্টার পাউন্ডের মূল্য ১ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত জিব্রাল্টার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভূখণ্ড।

সুইস ফ্রাঁ

সুইজারল্যান্ড ও পার্শ্ববর্তী লিচেনস্টাইনের অফিশিয়াল মুদ্রা সুইস ফ্রাঁ
ফাইল ছবি: এএফপি

ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড ও পার্শ্ববর্তী লিচেনস্টাইনের অফিশিয়াল মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাঁ। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মুদ্রার মধ্যে এটির অবস্থান সপ্তম।

সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে সুইস ফ্রাঁ প্রায়ই নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে এক সুইস ফ্রাঁর মূল্য ১ দশমিক ২১ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার সমান শূন্য দশমিক ৮৩ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪৭ টাকা।

কেম্যান ডলার

ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত ব্রিটিশ ভূখণ্ড কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের মুদ্রার নাম কেম্যান ডলার। ১৯৭০-এর দশকে এ মুদ্রা চালু হয়। বর্তমানে এক কেম্যান ডলারের মূল্য ১ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার। আর ১ মার্কিন ডলারের মূল্য শূন্য দশমিক ৮৩ কেম্যান ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৪৫ টাকা।

ইউরো

ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে ২০টি ইউরো ব্যবহার করে
ফাইল ছবি: এএফপি

ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অফিশিয়াল মুদ্রার নাম ইউরো। ইইউভুক্ত ২৭টি সদস্যদেশের মধ্যে ২০টি এই মুদ্রা ব্যবহার করে।

বর্তমানে ১ ইউরো সমান ১ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার শূন্য দশমিক ৮৯ ইউরোর সমান। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩৭ টাকা।

১০

মার্কিন ডলার

বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া মুদ্রা মার্কিন ডলার
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মার্কিন ডলার অল্পের জন্য শীর্ষ ১০ মুদ্রার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ১৭ শতকে চালু হওয়া এ মুদ্রা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইকুয়েডরসহ আরও কয়েকটি ভূখণ্ড ও স্বাধীন রাষ্ট্রে বৈধ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। আর বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া মুদ্রা মার্কিন ডলার।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মুদ্রার মজুত রয়েছে মার্কিন ডলারের। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলারের মজুত রয়েছে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি তেল, স্বর্ণ ও তামাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দাম নির্ধারণে ডলারই প্রধান মাধ্যম।