আইইএর প্রতিবেদন: জলবায়ুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না

আইইএ সতর্ক করে বলেছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের তুলনায় এ জ্বালানির চাহিদা ও ব্যবহার এখনো অনেক বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বিশ্বের ওপর পড়তে শুরু করেছে
ছবি: রয়টার্স

এখনো অনেক উচ্চমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। গতকাল মঙ্গলবার এ সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতাকে প্রাক্-শিল্পস্তরের ওপরে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে প্রতিশ্রুত জ্বালানি নীতিগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

সংস্থাটি বলেছে, ‘এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সীমিত রাখার প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের তুলনায় এই জ্বালানির চাহিদা ও ব্যবহার এখনো অনেক বেশি।’

আইইএ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘এক বছরের রেকর্ড–ভাঙা তাপমাত্রার পর এই ঝুঁকি জলবায়ু প্রভাবকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে শীতল বিশ্বের জন্য তৈরি করা জ্বালানিব্যবস্থার নিরাপত্তাকেও ক্ষুণ্ন করবে। ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্বন নির্গমন অবস্থায় ফেরা সম্ভব, তবে ‘এটি খুবই কঠিন।’

বিশ্বব্যাপী নীতিগত পরিবর্তন না হলে এই শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা প্রায় ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

দুবাইতে নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া জলবায়ুবিষয়ক কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতিবেদনটি সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে আইইএ কিছু ইতিবাচক উন্নয়নের দিকেও ইঙ্গিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উত্থান যেমন সৌর ও বায়ুশক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং তাপ পাম্প। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, রাস্তায় এখনকার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি থাকবে এবং সৌরশক্তি সামগ্রিকভাবে সমগ্র মার্কিন পাওয়ার সিস্টেমের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে।

এ ছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তির বৈশ্বিক অংশ বর্তমানে ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বর্তমানে নতুন অফশোর বায়ু প্রকল্পগুলোতে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তা নতুন কয়লা এবং গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় তিন গুণ বেশি।

আইইএ বলেছে, তারা আশা করছে, জ্বালানি তেলের চাহিদা ২০৪৫ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে আরও কঠোর পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া আইইএ বলছে, নবায়নযোগ্য পরিচ্ছন্নশক্তির রূপান্তর বিশ্বব্যাপী ঘটছে এবং এটি অপ্রতিরোধ্য।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, প্রচলিত জ্বালানি বাজারের অস্থিরতা ও চাহিদা বিবেচনায় ধরলে তেল এবং গ্যাস বিশ্বের জ্বালানি এবং জলবায়ু ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ বা নিরাপদ পছন্দের যে প্রতিনিধিত্ব দেখাত, তা আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে। ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে ক্লিন এনার্জি ট্রানজিশন ত্বরান্বিত করতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন সবচেয়ে আগে।