বৃহত্তম কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান

শিল্পীর দৃষ্টিতে নতুন আবিষ্কৃত কৃষ্ণগহ্বর গাইয়া বিএইচ৩ ও নক্ষত্রের ছবিছবি: ইএসওর সৌজন্যে

আমাদের এই আকাশগঙ্গা (মিল্কিওয়ে) ছায়াপথের বৃহত্তম কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটির ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে ৩৩ গুণ বেশি। এত দিন এটি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এ তথ্য জানিয়েছেন ফ্রান্সের গবেষকেরা।

নতুন আবিষ্কৃত কৃষ্ণগহ্বরটির নাম গাইয়া বিএইচ৩। অবজারভেটরি দা প্যারিসের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের (সিএনআরএস) জ্যোতির্বিদ পাসকোয়েল পানুজ্জো বলেন, কৃষগহ্বরটিকে অনেকটা আকস্মিকভাবে আবিষ্কার করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপের মহাকাশ সংস্থার গাইয়া মিশনের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এটির খোঁজ পাওয়া যায়।

গাইয়া মিশনটি মূলত আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ম্যাপ তৈরিতে কাজ করেছে। এটি এবার পৃথিবী থেকে ২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে আকুইলা গ্রহাণুপুঞ্জে বিএইচ৩ নামের কৃষ্ণগহ্বরটিকে শনাক্ত করেছে। গাইয়ার টেলিস্কোপ মূলত আকাশে কোনো নক্ষত্রের নিখুঁত অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। এর তথ্য থেকে জ্যোতির্বিদেরা নক্ষত্রের কক্ষপথ, তাদের ভর ও অদৃশ্য সঙ্গীকে খুঁজে বের করতে পারেন।

গাইয়ার টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃষ্ণগহ্বরটির অবস্থান শনাক্তের পর ভূপৃষ্ঠের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এর অস্তিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পানুজ্জো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘আমাদের কাছাকাছি এমন অধিক ভরসম্পন্ন কৃষ্ণগহ্বর অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে, তা কেউ ধারণা করেননি। একজনের গবেষণা জীবনে একবারই এ ধরনের আবিষ্কার করার সুযোগ আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরটিকে প্রদক্ষিণকারী সহচর নক্ষত্রের দোলাচল দেখে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করতে শুরু করেন।’

পানুজ্জো বলেন, ‘আমাদের সূর্যের চেয়ে কিছুটা ছোট ও উজ্জ্বল নক্ষত্রকে আমরা এক অদৃশ্য সঙ্গীর চারপাশে ঘুরতে দেখেছিলাম।’

গাইয়া বিএইচ৩ মূলত একটি নাক্ষত্রিক কৃষ্ণগহ্বর বা স্টেলার ব্ল্যাকহোল। মূলত নক্ষত্রের জীবদ্দশা পার হলে তার পতনের ফলে এ ধরনের কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হয়। তবে এগুলো বিশাল আকৃতির (সুপারম্যাসিভ) কৃষ্ণগহ্বরের চেয়ে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আলাদা। বিশাল আকৃতির অন্যান্য কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টির কারণ অজানা। এ ধরনের বড় কৃষ্ণগহ্বরকে ইতিমধ্যে দূরতম ছায়াপথগুলোয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। তবে পানুজ্জো বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কৃষ্ণগহ্বর আমাদের ছায়াপথে শনাক্ত হয়নি।’