অগ্নিপথে নিযুক্তির ঘোষণা ভারত সরকারের

অগ্নিপথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রোববার নয়াদিল্লিতে
ছবি: এএনআই

অগ্নিপথের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ সত্ত্বেও, অবিচল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকল্প প্রত্যাহারের পথে না হেঁটে দ্রুত নিযুক্তির দিকে এগিয়ে চলেছে সরকার। রোববারই তিন বাহিনীর প্রধান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর দ্রুত কর্মসূচি রূপায়ণের কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনী সোমবার অগ্নিপথ প্রকল্পে প্রশিক্ষণের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, জুলাই মাস থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্ত শুরু হবে।

ভারত সরকার যে অগ্নিপথ প্রকল্প থেকে সরবে না, বারবার তা বলা হয়েছে। আজ কর্ণাটকে সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তা বুঝিয়ে দিলেন। অগ্নিপথ প্রকল্পের উল্লেখ না করে তিনি বলেন, শুরুতে কোনো কোনো সিদ্ধান্ত অন্যায্য মনে হতে পারে, কিন্তু সময়ে বোঝা যাবে, সেসব সিদ্ধান্ত দেশগঠনে সহায়ক।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল অনিল পুরি রোববার বলেছেন, যুবসমাজ দ্রুত আন্দোলন ছেড়ে অগ্নিপথে ভর্তি হওয়ার সুযোগ যেন গ্রহণ করে। সরকার কোনো বিলম্ব করতে চায় না। তিনি এ কথাও বলেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য অগ্নিবীর হওয়ার দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর এই ঘোষণার পর বিজ্ঞপ্তি জারি হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবার থেকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে গেলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। জুলাই মাস থেকে তা শুরু হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অগ্নিবীরদের সেনাবাহিনীতে এক নতুন পদমর্যাদা দেওয়া হবে। যাঁরা এই প্রকল্পে যোগ দেবেন, তাঁদের প্রত্যেককে চার বছরের অর্জিত জ্ঞান ও তথ্য গোপন রাখতে হবে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল দীনেশ ত্রিপাঠী জানান, নৌবাহিনীতে নিযুক্তির নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ জুনের মধ্যে। পুরুষ ও নারী উভয়ের কাছেই অগ্নিবীর হওয়ার সুযোগ থাকবে।

বিমানবাহিনীর পক্ষে এয়ার মার্শাল এস কে ঝা জানিয়েছেন, তাঁরা নিযুক্তির নিবন্ধন শুরু করবেন ২৪ জুন থেকে। প্রথম দফার অনলাইন পরীক্ষা হবে আগামী ২৪ জুলাই।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা নিয়োগের শিবির বসবে। আপাতত ঠিক রয়েছে সারা দেশে ৮৩টি সমাবেশ করার। প্রথম বছরে সেনাবাহিনীতে ৪০ হাজার অগ্নিবীর নিযুক্তির কথা।

এদিকে ভারত সরকারের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ ঠেকাতে আজ দেশটির বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে পালিত হয় বন্‌ধ্। একই সঙ্গে ভারতজুড়ে যুবসম্প্রদায়ের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু সংগঠনের বন্‌ধ্‌ ডাকের পরিপ্রেক্ষিতে সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ গতকাল ৫০০টির বেশি ট্রেন বাতিল করে দেয়। গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় রেল।

বন্‌ধ্‌ সফল করতে ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, কেরালা, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা ও উত্তর প্রদেশে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সতর্কতা সত্ত্বেও রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভে বিহার ছিল সবচেয়ে বেশি উত্তাল। ওই রাজ্যসহ উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় রোববার থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্লক করে দেওয়া হয় বহু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। উত্তর প্রদেশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। বন্‌ধ্‌ মোকাবিলায় বহু রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লিসহ হরিয়ানার গুরুগ্রামে রোববার বন্‌ধের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও রেল অবরোধের চেষ্টা করা হয় বলে জানা গেছে।

অগ্নিপথের বিরোধিতায় কংগ্রেস দিল্লির যন্তরমন্তরে রোববার থেকেই সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। রোববার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি জানাতে একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দর সঙ্গে দেখা করবে। দেশজুড়ে যুব বিক্ষোভের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, বারবার চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই সরকার যুবকদের আগুনের পথে (অগ্নিপথ) চলতে বাধ্য করেছে। এ অবস্থার জন্য শুধু প্রধানমন্ত্রীই দায়ী।