আজ মমতার শপথ, বিজেপির ধিক্কার দিবস

বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন। বেলা পৌনে ১১টায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দাপ্তরিক ভবন রাজভবনের ঐতিহাসিক থ্রোন কক্ষে শপথ নেবেন মমতা। অন্যদিকে, আজ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।

এ নিয়ে এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি নির্বাচনে নিজের আসনে পরাজিত হওয়ার পর এ পদে বসছেন। সংবিধান অনুযায়ী, মমতাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের কোনো একটি আসনে জয়ী হয়ে আসতে হবে বিধানসভায়।

আজ মমতাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। স্বল্প পরিসরে আয়োজিত এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তৃণমূলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিদায়ী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা মনোজ টিগ্গা, বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী ও তৃণমূলের ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে।

অন্যদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতি ও পরশু শুক্রবার চার দফায় নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন নবনিযুক্ত প্রোটেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আবার ৯ মে রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে রাজভবনেই।

এদিকে নির্বাচনে পরাজিত বিজেপি নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতার অভিযোগ এনে আজ অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এ রাজ্যে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসা বেড়ে যাওয়া এবং তাদের বহু কর্মীকে হত্যা করা, বাড়িঘর ভাঙচুর, জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটপাটের অভিযোগ করেছে বিজেপি। সেই অবস্থান ধর্মঘটে শামিল হতে দিল্লি থেকে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। গতকাল মঙ্গলবার তিনি সংঘর্ষ এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে গিয়ে বলেছেন, দেশভাগের সময়ের স্মৃতি এবার নতুন করে তুলে আনছে তৃণমূল।

নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষ ও হিংসার অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি উঠেছে। এ দাবি করে এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি ও হিংসার সিবিআই তদন্তের দাবিতে জোড়া আবেদন জমা পড়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে।

গতকাল ইন্ডিক কালেকটিভ ট্রাস্ট নামের একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদন জানিয়ে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে এ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের নির্দেশ দেওয়া হোক।

ওই সংস্থা আরও দাবি করেছে, সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে এ সংঘর্ষ ও হিংসায় কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে কি না, তা তদন্ত করানো হোক। আবেদনকারী জে সাই দীপক রাজ্যে হিংসা রুখতে ও আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকারকে এ রাজ্যে সেনা ও সিআরপিএফ মোতায়েনেরও আবেদন করেছেন।

অন্যদিকে, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনার তদন্তের জন্য একটি তদন্তকারী দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই তদন্তকারী দলকে রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।