‘ইয়েলো ফাঙ্গাসের’ লক্ষণ ও প্রতিকার

দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার দিক দিয়ে কালো ও সাদা ছত্রাকের সঙ্গে হলুদ ছত্রাকের পার্থক্য রয়েছে
ছবি: এএফপি

ভারতে এবার ইয়েলো ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ ব্ল্যাক ও সোয়াইট ফাঙ্গাসের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত যখন বিপর্যস্ত, তার মধ্যে এই মাসের প্রথম দিকে দেশটিতে প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়। এরই মধ্যে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, যাতে চোখ হারাতে হচ্ছে অনেককে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সামাল দেওয়া নিয়ে যখন তৎপরতা, তার মধ্যে খবর আসে হোয়াইট ফাঙ্গাস সংক্রমণের।

তার মধ্যেই এখন ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর এসেছে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ শহর থেকে। তবে বাস্তবে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটেছে কি না, সে বিষয়টি এখনো ভারতীয় কোনো কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি।

কিন্তু ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে তার চেয়ে ভয়ংকর ইয়েলো ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর নতুন উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এই ছত্রাকের সংক্রমণ বিষয়ে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য জানা গেছে, তা ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম তুলে ধরেছে। হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, সতর্কতা প্রভৃতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। দেশটির অন্যান্য গণমাধ্যমেও একই ধরনের প্রতিবেদন দেখা গেছে। পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

হলদু ছত্রাকের সংক্রমণ এমন যে তা মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই একদম শুরুতেই এই ছত্রাকের সংক্রমণের বিষয়ে সতর্কতা ও মনোযোগ জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য ছত্রাকের মতোই অপরিচ্ছন্ন ও দূষিত পরিবেশের মাধ্যমে হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে।অতিরিক্ত আর্দ্র আবহাওয়া এর সংক্রমণ ছড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। পচা-বাসি-পুরোনো খাবার থেকেও এই ছত্রাক ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও এটা শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ খুঁজতে গিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের চিহ্নিত করেছিলেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছিলেন, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্তদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা আরও দুর্বল হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে যাঁদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়, তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েও এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে থাকে।

ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সঙ্গে হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণের ধরনে তফাত রয়েছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের মুখমণ্ডলই আক্রান্ত হয়। আর ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেয় শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আক্রমণের মধ্য দিয়ে। এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো বিঘ্নিত হয়।

হলুদ ছত্রাক সংক্রমণ আরও বেশি বিপজ্জনক ও তীব্র হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এই রোগ সংক্রমণের প্রথম দিনেই তা শনাক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

ইয়েলো ফাঙ্গাস সংক্রমণের লক্ষণ
* হজমে সমস্যা
* বিপাক প্রক্রিয়া ধীরগতির করে ফেলা
* ক্ষুধামান্দ্য
* অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
* ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব
* ক্ষত থেকে পুঁজ বের হওয়া
* ক্লান্তিবোধ
* আলস্য
* চোখ বুজে আসা প্রভৃতি
* অপুষ্টি
* অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল
* শরীরে পচন ধরা

চিকিৎসা

সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসাসেবা নেওয়া হয়, তাহলে হলুদ ছত্রাক নিরাময়যোগ্য। হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ইনজেকশন দেওয়া হয়।