কংগ্রেসে বিভাজন তৈরি করতে মোদির পদক রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের রাজ্যসভায় প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে যে কাজ শুরু করেছিলেন, গুলাম নবী আজাদকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে সেই লক্ষ্য হাসিলে আরও এক কদম এগিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত মঙ্গলবার রাত থেকেই কংগ্রেসে শুরু হয়েছে নতুন উথালপাতাল। বিভাজন হয়েছে স্পষ্টতর।

কংগ্রেসে ‘জি–২৩’ গোষ্ঠী নামে ইতিমধ্যেই যাঁরা পরিচিত, বর্ষীয়ান কাশ্মীরি রাজনীতিক গুলাম নবী আজাদ তাঁদের অন্যতম। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে দলে পূর্ণ সময়ের সভাপতি ও সর্বস্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি জানিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন দলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ২৩ জন শীর্ষ নেতা। সেই থেকে ‘জি–২৩’ নামেই তাঁদের পরিচয়। গুলাম নবী আজাদ ওই ২৩ জনের অন্যতম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যসভার এই বিরোধী নেতার বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। হীনবল ও নড়বড়ে কংগ্রেসে তাঁকে কেন্দ্র করে সেই যে উথালপাতাল শুরু, পরবর্তী সময়ে তা ক্রমেই বেড়ে গেছে। সেই বিভাজনকে আরও উসকে দিতেই ৭৩ বছর বয়সী গুলাম নবী আজাদকে এবার জনসেবার জন্য পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করল মোদি সরকার। আর সেই সঙ্গে প্রত্যাশিতভাবে কংগ্রেসে বিভাজন স্পষ্টতর হলো।

গুলাম নবীর সহযোগী ‘জি–২৩’–এর নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনন্দ শর্মা তাঁকে সাধারণভাবে অভিনন্দন জানালেও সাবেক আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বালের টুইট তীক্ষ্ণ ও তির্যক। গুলাম নবীর সহযোগী ও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত সিব্বাল লেখেন, ‘গুলাম নবী আজাদ পদ্মভূষণ পেলেন। অভিনন্দন ভাইজান। সারা দেশ জনসেবায় আজাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিল কিন্তু কংগ্রেস তার প্রয়োজন বোধ করেনি।’ সিব্বালের এই টুইট কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও পরোক্ষ সমালোচনা। কারণ, গুলাম নবীকে রাজ্যসভায় এবার আর মনোনীত করা হয়নি।

আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বাল, শশী থারুর, রাজ বাব্বরদের মতো কংগ্রেস নেতা গুলাম নবীকে অভিনন্দন জানালেও কংগ্রেসের আরও এক সাবেক মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সদস্য জয়রাম রমেশ খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তা করতে গিয়ে জয়রাম রমেশ পরোক্ষে প্রশংসা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। গুলাম নবীর মতো পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছিল বুদ্ধদেবকেও, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। জয়রামের টুইটে ছিল তারই বুদ্ধিদীপ্ত ইঙ্গিত। তিনি লেখেন, ‘ঠিকই করেছেন। উনি আজাদ থাকতে চেয়েছেন, গোলাম নয়।’ বুদ্ধদেবের মতোই পদ্ম–সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সংগীতশিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও তবলাবাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।

প্রশংসা ও সমালোচনার এই পর্বের মধ্যেই রটে যায় গুলাম নবী তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে কংগ্রেসের নাম মুছে দিয়েছেন। যদিও গুলাম নবী তা অস্বীকার করে বলেন, কোনো কোনো মহল এই বাজে প্রচার করছে। ধন্দ সৃষ্টি করা তাদের উদ্দেশ্য। টুইটার প্রোফাইল থেকে কোনো কিছুই মুছে দেওয়া হয়নি, বাড়তি কিছু যোগও করা হয়নি। প্রোফাইল আগে যেমন ছিল, তেমনই আছে।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, গুলাম নবীকে নিয়ে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতি করে আসা ‘অসন্তুষ্ট’ গুলাম নবীকে দলে টানতে পারলে কংগ্রেসকে যেমন আরও দুর্বল করা যাবে, তেমনই বিজেপির ‘মুসলমান বিদ্বেষের’ ধারণা ভুল প্রমাণ করাও সম্ভবপর হবে।

গুলাম নবী জম্মু–কাশ্মীরের অন্যতম শীর্ষ নেতা। বিজেপির ধারণা, গুলাম নবী জম্মুর নেতা হলেও ‘নতুন কাশ্মীর নীতি’র সফল রূপায়ণে তাঁর অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কংগ্রেসকে দুর্বল করতে বিজেপি ওই দলের নতুন প্রজন্মের নেতাদের দলে টানা শুরু করেছে অনেক দিন থেকেই। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ, আরপিএন সিং, ইমরান মাসুদ, অদিতি সিংদের দলে টেনেছে। নজরে রয়েছেন রাজস্থানের যুবনেতা শচিন পাইলট ও গুলাম নবীর মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদ। গুলাম নবীকে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া সেই রাজনৈতিক ছকেরই অঙ্গ বলে ধারণা।