করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে: কেজরিওয়াল

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত শহরগুলোর তালিকায় অন্যতম দিল্লি। রেকর্ড সংক্রমণ; অক্সিজেন সংকটে রোগী, স্বজন ও হাসপাতালগুলোর অসহায়ত্ব; অক্সিজেন না পেয়ে একের পর এক করোনা রোগীর মৃত্যু; দিন-রাত শ্মশানে সারি সারি জ্বলন্ত চিতা—দিল্লির এমন নানা ছবি ভারত ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। সর্বেশেষ দুই দিন দিল্লিতে দুই হাজারের নিচে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কমে এসেছে রোগী শনাক্তের হার। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দাবি করেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। খবর এনডিটিভির।

আজ সোমবার টুইট বার্তায় এমন দাবি করেছেন কেজরিওয়াল। তবে টুইটে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কেজরিওয়াল লিখেছেন, ‘সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তৃতীয় ঢেউ ঠেকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আরও পড়ুন

টুইটে বেশ কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডারের ছবি যুক্ত করেছেন কেজরিওয়াল। লিখেছেন, ছয় হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে। তা দিয়ে করোনা রোগীদের জন্য তিন হাজার অক্সিজেন বেড স্থাপন করা যাবে। দিল্লির জন্য এসব অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ায় তিনি টেলিকম প্রতিষ্ঠান এইচসিএল ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, বিশেষত চীনে ভারতীয় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান। করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এমন আরও প্রস্তুতিমূলক কাজ চলমান বলেও টুইটে জানান কেজরিওয়াল।

আরও পড়ুন

সোমবার দিল্লি সরকার জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১ হাজার ৫৫০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২০৭ জন। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই দিন ধরে দিল্লিতে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দিনে দুই হাজারের নিচে রয়েছে। শনাক্তের হার নেমে এসেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশে। মৃত্যুর হার এখন ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ঘোষণা অনুযায়ী, সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে, সেটা নিরাপদ।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লিতে এখন সক্রিয় করোনা রোগী ২৪ হাজার ৫৭৮ জনে নেমে এসেছে। গত ৮ এপ্রিলের পর যা সর্বনিম্ন। ১৩ হাজার রোগী বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৬১ শতাংশে, যা গত ১ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ। দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৩৭৫ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

সরকারি হিসাবে, গত বছরের শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত দিল্লিতে ১৪ লাখ ১৮ হাজার মানুষের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ১৮১ জন। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দিল্লির ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে টিকা দেওয়া ও টানা লকডাউনের সুফল পেতে শুরু করেছে দিল্লি। লকডাউনের জেরে সংক্রমণ অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। যদিও কেজরিওয়াল সরকার চলমান লকডাউনের মেয়াদ ৩১ মে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে প্রয়োজনীয় টিকার সংকট কেজরিওয়াল সরকারের সামনে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে। শনিবার পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় দিল্লিতে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। সংকট সমাধানে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্নার কাছ থেকে সরাসরি টিকা কেনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। তবে এসব প্রতিষ্ঠান শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টিকা চুক্তি করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্র্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিল্লিতে প্রয়োজনীয় টিকা সরবরাহ বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, প্রতি মাসে দিল্লির ৮০ লাখ ডোজ করোনার টিকা প্রয়োজন। কিন্তু মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সরবরাহ করেছে মাত্র ১৬ লাখ ডোজ টিকা। জুনে টিকার সরবরাহ আরও আট লাখ ডোজ কমানো হয়েছে।