করোনার রাশ ঠেকাতে উৎসব ঘরে কাটাতে পরামর্শ ভারতে

ভারতে করোনা পরীক্ষা
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম হতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবাইকে সতর্ক করে জানাল, উৎসবের মৌসুমে আনন্দে রাশ না টানলে আগামী কয়েক মাস দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের মহাপরিচালক বলরাম ভার্গব ও নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল একযোগে বলেছেন, এই বছরটায় অন্তত উৎসবের দিনগুলো ঘরে বসে কাটান, যাতে আগামী বছর থেকে নিশ্চিন্তে আনন্দ করতে পারেন। শুক্রবার শুরু হয়েছে গণপতিপূজা। সামনের মাসে দুর্গাপূজা। তাঁরা বলেছেন, এই সময়টা মারাত্মক। সতর্ক না হলে কেরালার মতো হাল হবে।

কেরালায় ওনাম উৎসবের দরুন সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে যায়। এখন অবশ্য দক্ষিণি ওই রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার থেকে কমে ২৫-২৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দেশের সংক্রমণও যেখানে প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, তা কমে হয়েছে ৩৫ হাজার। নতুন শঙ্কা মিজোরামকে নিয়ে। সেখানে দৈনিক এক হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। তুলনায় বড় রাজ্য মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক বা অন্ধ্র প্রদেশে সংক্রমণের হার সহনীয়।

দৈনিক টিকা দেওয়ার সংখ্যা ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই এক কোটি করে। কেন্দ্রীয় সরকারের শুক্রবারের হিসাব, সারা দেশে ৭২ কোটি মানুষ অন্তত একবার কোভিড টিকা পেয়েছেন। সরকার এই বছরে সেই সংখ্যা ১০০ কোটিতে নিয়ে যেতে চায়। শাসক দল বিজেপির সিদ্ধান্ত, ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে সারা দেশে রেকর্ডসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা গতকাল এই সংকল্পের কথা জানিয়ে বলেন, প্রতিটি বুথ পর্যায়ে দলীয় কর্মীদের এই বিষয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

দেশে টিকা দেওয়ার সংখ্যা বাড়ার ফলে কোভিডে সংক্রান্ত ‘কোউইন অ্যাপেও’ বদল ঘটানো হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থা চটজলদি বুঝতে সাহায্য করবে পর্যটকেরা করোনার টিকা নিয়েছেন কি না। ওই ব্যবস্থাকে ‘খদ্দেরকে জানুন’ বলা হচ্ছে। অফিস, হোটেল, মলসহ বিভিন্ন স্থানে যেখানে পর্যটকদের টিকাসংক্রান্ত তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক, সেখানে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

দেশে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তা সত্ত্বেও সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন প্রচার অভিযান শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, কোভিডের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র অস্ত্র টিকা নেওয়া। টিকার একটি ডোজ নিলে ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো যায়, দুটি ডোজ নিলে মৃত্যু ঠেকানো যায় ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পল বলেছেন, গত এপ্রিল-মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের টিকা নেওয়া ছিল না। তিনি বলেন, দুটি ডোজ নিলে সংক্রমণ হবে না তা নয়, তবে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন কমে যাবে। মৃত্যুও হবেই না বলা যেতে পারে। করোনায় মৃত্যু ঠেকানোর একমাত্র উপায় টিকা নেওয়া।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি মানুষকে অন্তত একটি ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটকে ওই সময়ের মধ্যে ৬৬ কোটি কোভিশিল্ডের ফরমাশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক সর্বভারতীয় সংবাদপত্র জানিয়েছে, দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত ভারত সরকার টিকা রপ্তানি করবে না। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পেও টিকা দেবে না। এই প্রকল্পে দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা দেওয়া হয়।