উত্তর প্রদেশে পঞ্চায়েতে পিছিয়ে দুশ্চিন্তায় বিজেপি

নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ
ফাইল ছবি: এএফপি

পশ্চিমবঙ্গে আশা ভঙ্গের পর ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপিকে চিন্তায় ফেলল উত্তর প্রদেশ। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বিরোধী সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। এই ভোটকে বিজেপি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল। কারণ, আগামী বছর রাজ্য বিধানসভার ভোটের আগে এটাই ছিল শেষ শক্তি পরীক্ষা।
রাজ্যের জেলা পঞ্চায়েত ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৭৪৭ আসন। বিজেপি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তাদের প্রাপ্য আসন ৬৬৬। বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ও কংগ্রেস পেয়েছে যথাক্রমে ৩২২ ও ৭৭টি আসন। বিধানসভা ভোটের আগে জেলা পঞ্চায়েত দখল সব রাজনৈতিক দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজ্যজুড়ে এই ভোট সেই সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন করোনার প্রকোপে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে এবং কৃষক আন্দোলনের অসন্তোষ তীব্র। কৃষক আন্দোলন ছয় মাস ধরে অব্যাহত। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলেই শুধু নয়, অন্যত্রও তার প্রভাবও পড়েছে। পশ্চিম–উত্তর প্রদেশের সব জেলাতেই বিজেপিকে পিছিয়ে দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোক দল। বিজেপি খারাপ করেছে পূর্ব ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও। বারানসি ও অযোধ্যার ভোটের ফল তার প্রমাণ।

বারানসি, অযোধ্যা ও মথুরা বিজেপির বরাবরের শক্ত ঘাঁটি। বারানসি আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী এলাকা। তিন জেলাতেই মন্দির আন্দোলন তীব্রতর। অথচ দেখা গেল, বারানসির ৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে মাত্র ৮টি। এসপি পেয়েছে ১৫, বিএসপি ৫। অযোধ্যার হাল আরও খারাপ। সেখানে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৬টি আসন। এসপি পেয়েছে ২২, বিএসপি ৪। মন্দির শহর মথুরাকেও বিজেপির হাল তথৈবচ। জয় সেখানে মাত্র ৩ আসনে। এই জেলায় সিংহভাগ আসন জিতেছে বিএসপি (১২)। আরএলডি পেয়েছে ৯টি আসন। গড় বলে পরিচিত মিরাটেও বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। পেয়েছে মাত্র ৬টি আসন। এসপি এ বিএসপি জিতেছে যথাক্রমে ৯ ও ১২টি। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে আম আদমি পার্টিও বেশ কিছু আসন জিতেছে। বিজেপি এখন চাইছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন জোগাড় করে জেলার কর্তৃত্ব দখলে রাখতে।
উত্তর প্রদেশের দৈনিক সুচনা সন্দর্ভের সম্পাদক রেখা ঝা এই বিপর্যয়ের ব্যাখ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, যে সময় করোনার মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের উচিত ছিল সর্বস্ব নিয়োগ করা, সে সময় বিজেপি সরকার ভোট করাতে উঠেপড়ে লাগল। মানুষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।

রাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শরদ প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, আদিত্যনাথ সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। করোনায় ব্যতিব্যস্ত রাজ্যের মানুষ। তার ওপর ছয় মাস ধরে চলছে কৃষক বিক্ষোভ, যা প্রশমনে সরকারের কোনো হেলদোলই দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাবের সমালোচনা করে কৃষকনেতা হান্নান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ৩৮৭ জন কৃষকের মুত্যু হয়েছে। করোনায় ধুঁকছে গোটা রাজ্য। অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই নির্বিকার। তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্চায়েত ভোটে কৃষকসমাজের স্লোগান ছিল একটাই—বিজেপিকে ভোট নয়।

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতা দর্শন পাল সিং বলেন, আগামী বছর বিধানসভা ভোটেও তাঁদের বক্তব্য এটাই থাকবে। বিজেপি ছাড়া যাকে খুশি ভোট দিন। বিজেপি কৃষকসমাজের শত্রু। সংযুক্ত কৃষক মোর্চা নেতারা পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপির ভরাডুবির ঠিক পরপরই উত্তর প্রদেশের পঞ্চায়েত ভোটের ফল বিজেপির কপালের রেখা গাঢ় করে তুলেছে। মাত্র চার দিন আগে কর্ণাটকের পুরসভার ভোটেও বিজেপির ভরাডুবি ঘটে। ১০টি বড় শহরের পুর নির্বাচনে বিজেপি পায় মাত্র ১টি। কংগ্রেস সেখানে জেতে ৬টি, জেডিএস ২টি। ১০ম শহর বিদারে কংগ্রেস একক গরিষ্ঠ দল।

আগামী বছর উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও পাঞ্জাব বিধানসভার ভোট। কৃষক আন্দোলন, করোনার প্রকোপ এবং মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বসহ সার্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বিজেপির ভাবমূর্তি ফিকে হয়ে গেছে। বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন ও রাজিব প্রতাপ রুডি ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করেছেন, অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন না হলে পরীক্ষায় উতরানো কঠিন।