খসড়া তালিকার ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের রাজনীতি এই মুহূর্তে টগবগ করে ফুটছে আসামের চূড়ান্ত খসড়া নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রকাশকে কেন্দ্র করে, যে তালিকায় রাজ্যের ৪০ লাখ মানুষের নাম ওঠেনি। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ মঙ্গলবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, খসড়া তালিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্র কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানিয়েছেন, যাঁদের নাম তালিকায় ওঠেনি, তাঁদের আপত্তি বা দাবিদাওয়া মেটাতে একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি আর এফ নরিম্যান এ নির্দেশ জারি করে বলেন, ১৬ আগস্টের মধ্যে সেই স্বচ্ছ পদ্ধতির বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতকে জানাতে হবে। নাগরিকপঞ্জী তৈরির দায়িত্বে থাকা আসামের রাজ্য কো-অর্ডিনেটর বিচারপতিদের বলেন, যাঁদের নাম তালিকায় ওঠেনি, তাঁদের মধ্যে ৩৭ লাখ ৫৯ হাজারের দাবি বাতিল করা হয়েছে, ২ লাখ ৪৮ হাজারের দাবির ফয়সালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার ওই চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। 

তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকেই জাতীয় রাজনীতি সরগরম। গতকাল সারা দিনের জন্য রাজ্যসভা মুলতবি হয়েছিল, আজও তা মুলতবি হয়ে যায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। নাগরিক নিবন্ধন প্রকাশ করা নিয়ে অমিত শাহ বলেন, এই গোলমালের মূলে হচ্ছে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর করা আসাম চুক্তি। তিনি বলেন, রাজীব প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আসাম থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের বিতাড়িত করার উদ্দেশে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তির দায়িত্ব পরপর দুটি ইউপিএ সরকার পালন করতে পারেনি। কংগ্রেস যা পারেনি, চার বছরে রাজত্বে বিজেপি তা করে দেখাল।
অমিত শাহর এ বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই বিরোধীরা সদলে রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে আসেন। মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে আরও একবার ভাগাভাগির মুখে দাঁড় করাচ্ছে বলে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিযোগ জানাতে থাকেন। চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু সভা শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে সারা দিনের জন্য রাজ্যসভা মুলতবি করে দেন। সভার ঝগড়া এরপর চলে আসে সংসদ ভবনের বাইরে। সেখানে কংগ্রেস সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে তীব্র বিবাদে জড়িয়ে পড়েন বিহার থেকে নির্বাচিত বিজেপির মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে।
নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে জনমত গড়ে বিজেপিবিরোধী জোট জোরদার করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লি এসে পৌঁছেছেন। আজ দুপুরে তিনি সংসদ ভবনের কাছে এক অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বিজেপিকে তুলোধুনা করেন। তিনি বলেন, আজ আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নের ছক কষা হয়েছে, আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও তা করা হবে। এভাবে বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে চাইছে। গোটা আসামে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। তিনি বলেন, প্রাণ থাকতে এই ভাগাভাগি করতে দেবেন না। সর্বস্ব নিয়ে রুখে দাঁড়াবেন।
মমতার এই ভাষণ শেষ হতেই দলীয় দপ্তরে নাগরিক নিবন্ধনের যৌক্তিকতা নিয়ে সরব হন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মমতার উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে মিথ্যা রটাবেন না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। গৃহযুদ্ধের গল্প শোনাবেন না। অমিত শাহ বলেন, ‘মমতার ভাষণ শুনে আমি থ হয়ে গেছি। দয়া করে ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করবেন না।’
অমিত শাহ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই নাগরিকপঞ্জী তৈরি করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলকে আজ পরিষ্কার করে জানাতে হবে তারা আসামের জনগণের ভালোমন্দের কথা চিন্তা করেন, নাকি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য দরদ অনুভব করেন। তিনি বলেন, আসামের মানুষদের অধিকার হরণ করে নিচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। কেড়ে নিচ্ছে শিক্ষার অধিকার। চাকরির অধিকার। নাগরিকপঞ্জী তৈরির উদ্দেশ্য ভূমিপুত্রদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।
মমতা সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে বলেন, আসামে যে অন্যায় করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।