ছেলে কালো বলে...
ঘটনাটি বিহারের। পাত্রের গায়ের রং কালো বলে বিয়ের আসর থেকে চম্পট দিয়েছেন পাত্রী। ঘটনাটি ইন্দল কুমার নামের এই পাত্রকে এতটাই হতাশ করেছে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর ওমুখো হবেন না এ জীবনে।
বিয়ে ঠিক হয়েছিল কয়েক দিন আগে। পাত্রী বিহারের সমস্তীপুর জেলার রোসড়ার সিংহমা গ্রামের কুমকুম কুমারী। উৎসবের আমেজ ছড়ায় দুই পরিবারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইন্দলকে নিয়ে নাচতে নাচতে বেগুসরাইয়ের সালোনা গ্রাম থেকে কনের বাড়ি সিংহমা পৌঁছান বরযাত্রীরা। সেজেগুজে তৈরি ছিলেন পাত্রী কুমকুম কুমারীও।
ঝামেলার শুরু এর পরেই। কনেকে বিয়ের মণ্ডপে নিয়ে আসতে বলেন পুরোহিত। শুভদৃষ্টি, মালাবদল হবে। মেয়ের পরিজনেরা ছাদনাতলায় নিয়ে যান কুমকুমকে। মুখ ঢাকা ঘোমটায়। হবু বরকে দেখতে ঘোমটা তুলেই চটে লাল কুমকুম। চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। বিশের কোঠায় ওঠা কুমকুম বলেন, ‘কী কালো ছেলেরে বাবা। ওকে আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।’ কারও কথা না শুনেই বিয়ের মণ্ডপ থেকে চলে যান ওই তরুণী।
এরপর মেয়ের বাড়ির সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয় বরযাত্রীদের। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলেন ইন্দল। কনেপক্ষের লোকদের ডেকে বলেন, ‘ওকে একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসুন না।’ লাভ হয়নি তাতে। দুই পক্ষে হাতাহাতির উপক্রম হয়। বরযাত্রীদের আটকে দেন এলাকাবাসী। আজ শুক্রবার সকালে পণের টাকা, উপহার নিয়ে সমস্তীপুরে পৌঁছান বরের কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধু। সব জিনিস ফেরত পেয়ে বরযাত্রীদের রেহাই দেন কুমকুমের আত্মীয়স্বজনেরা।
বিয়ে করতে এসে খালি হাতে ফিরতে হয় ইন্দল কুমারকে।
এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন ইন্দল। তাঁর কথা, ‘আমি কালো। এতে আমার কী দোষ? আগেই বলতে পারত বিয়ে করবে না। এক বাড়ি লোকের সামনে এভাবে অপমান করার মানেটা কী?’
তবে এসব নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেবে না ইন্দলের পরিবার।
সিংহমা গ্রামের প্রধান সুভাষ ঠাকুরও শুনিয়েছেন তাঁর অসহায়ত্বের কথা, ‘মেয়ে যদি বিয়ে না করতে চায়, তা হলে কিছুই করার নেই।’
বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা বিরল। বিয়েশাদির ক্ষেত্রে সাধারণত মা-বাবা বা পরিবারের সিদ্ধান্তে মেয়েরা অমত করেন না।
বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন, এমন একজন প্রবীণ গ্রামবাসী বলেন, বিহারে নারীদের অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্র নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বহু প্রকল্প গ্রহণ করছে। এ ঘটনাটি হয়তো তারই একটা প্রতিচ্ছবি। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়া