জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে আরও ড্রোন হামলা
ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বারবার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে শত্রুশিবিরের ড্রোন। গত শনিবার দিবাগত রাতে জম্মুর বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ল দুটি স্বয়ংক্রিয় চালকহীন উড়ন্ত যান বা ড্রোন। রাতের অন্ধকারে গুরুতর কিছু ঘটার আগেই তৎপর সেনারা তা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলি এড়িয়ে ড্রোন দুটি চলে যায়। কোথায়—সেই হদিস অবশ্য পাওয়া যায়নি। যেমন বোঝা যাচ্ছে না, সীমান্তের ওপার না এপার, কোন এলাকা থেকে কারা ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
শনিবারের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি সামান্যই। ড্রোন মারফত দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও কারও মৃত্যু হয়নি। আহত হয়েছিলেন বিমানবাহিনীর দুই সেনাসদস্য। তবে গত রোববার দ্বিতীয় দফায় ড্রোন হামলায় অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। ড্রোনের সঙ্গে বিস্ফোরক ছিল কি না, তা–ও জানা যায়নি। ভারতের সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, সীমান্তপারের ‘লো কস্ট ওয়ারফেয়ার’ নীতির অঙ্গ এই ড্রোন হামলা। এমন ধরনের হামলা চালাতে যা খরচ, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ পড়ে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, এত দিন ধরে সীমান্তে গোলাগুলি চলেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখার ২০–২৫ কিলোমিটার দূরত্বে সেনাছাউনিতে ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা আগে ঘটেনি। সেই নিরিখে পরপর দুদিনের ড্রোন হামলা সীমান্তপারের সন্ত্রাসের নবতম অধ্যায়।
সীমান্তবর্তী জম্মু–পাঠানকোট জাতীয় সড়কের কাছে কালুচক পুরমন্ডল রোডে রয়েছে সেনাঘাঁটি। রোববার মধ্যরাত নাগাদ তার ওপর একটি ড্রোনকে চক্কর দিতে দেখা যায়।
পাহারাদার সেনানীরা গুলি ছুড়লে সেটি চলে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পর আরও একটি ড্রোন সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ে। দুটি ড্রোন লক্ষ্য করে ২৫টি গুলি ছোড়া হয়। আশপাশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে এ ঘটনার কথা জানিয়ে বলা হয়, সর্বত্র হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এই হামলা জয়শ–ই–মুহাম্মদ অথবা লস্কর–ই–তাইয়েবার কাজ। খুব নিচুতে ওড়ার দরুন এই ধরনের ড্রোনগুলো রাডারের নজর এড়াতে পারে। এর পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মদদ থাকার বিষয়টিও গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে হামলার উৎস সম্পর্কে তারা এখনো নিশ্চিত নয়। সীমান্তের ওপার থেকে, না এপার থেকে ড্রোন নিয়ন্ত্রিত, সেই তদন্ত চলছে।
ভারতের পশ্চিম সীমান্ত বেশ কিছুদিন ধরেই শান্ত। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষ–বিরতি চলছে। বেসরকারি উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনাও অব্যাহত। জম্মু–কাশ্মীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগও চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জম্মু–কাশ্মীরের সব আঞ্চলিক দলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকও করেছেন।
এই অবস্থায় পরপর দুদিন এই হামলার নেপথ্য কারণ ওই রাজনৈতিক উদ্যোগ বানচাল করা বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, শান্ত কাশ্মীর যারা চায় না, তারাই এর পেছনে। শুধু ড্রোন হামলাই নয়, রোববার উপত্যকার এক পুলিশের বাড়িতেও দুষ্কৃতকারীরা বেপরোয়া গুলি চালায়। তাতে ওই পুলিশ কর্মী ও তাঁর স্ত্রী নিহত হন। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, কাশ্মীরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বানচাল করতে আগামী দিনে এমন ধরনের আরও সন্ত্রাসী আক্রমণ হতে পারে।