জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকীতে তাঁর নামে গবেষণা কেন্দ্রের জমির দখল নেবে সিপিএম
উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাম নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসুর ১০৮তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ৮ জুলাই। একটানা ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জ্যোতি বসুর নামে কলকাতার সল্টলেকে একটি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এই কমিউনিস্ট নেতার জন্মবার্ষিকীতেই সেই জমির দখল বুঝে নেবে তাঁর দল সিপিএম।
জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন ১৯৭৭ সালের ২১ জুন। কংগ্রেস দলীয় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বিদায় নেওয়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন জ্যোতি বসু। এরপর মুখ্যমন্ত্রী পদে আসেন সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১১ সালের জুন মাসের নির্বাচনে এই রাজ্যে বাম ফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার করোনা মহামারির মধ্যে সাদামাটাভাবে জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালন করবে সিপিএম। ওই দিন কলকাতার সল্টলেকে জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্র গড়ার জন্য কেনা জমির দখল নেবে দলটি। এরপর ওই জমির পাশে রবীন্দ্রতীর্থ মিলনায়তনে ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করবে সিপিএম। সেখানে থাকবেন হাতে গোনা কিছু বামপন্থী নেতা।
জ্যোতি বসুর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জের বারুদি গ্রামে। তাঁর শৈশব বারুদিতে কাটলেও পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতায় বসবাস করেন। জ্যোতি বসুর বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক। জ্যোতি বসু কলকাতায় এসে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে বারুদিতে জ্যোতি বসুর পৈতৃক ভিটা ও বসতবাড়ি ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে এখনো রয়েছে। একসময় কলকাতায় জ্যোতি বসুর পরিবার বসবাস শুরু করলেও ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে এখনো বারুদিতে রয়েছে তাঁদের ঐতিহাসিক বাসভবন। বাংলাদেশ সরকার সেই বাড়ি অধিগ্রহণ করে এখন সেখানে একটি জাদুঘর তৈরি করেছেন।
এদিকে জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ও কর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কলকাতার সল্টলেকে ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ’ নামে একটি কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় বাম ফ্রন্ট সরকার। এই লক্ষ্যে সিপিএম বাম ফ্রন্ট সরকারের কাছ থেকে পাঁচ একর জমি কেনে। এমনকি নিউটাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর করারও সিদ্ধান্ত নেয়। সিপিএম পাঁচ একর জমির জন্য পাঁচ কোটি টাকা প্রদান করে জমির মালিক রাজ্য সরকারের সংস্থা হিডকোকে। কিন্তু ২০১১ সালে বাম ফ্রন্টের পরাজয়ের পর সবকিছু উল্টে যায়। জ্যোতি বসু নগর ফিরে আসে নিউ টাউনে। ফলে সিপিএমের কেনা পাঁচ একর জমির দখল আটকে যায় বিভিন্ন জটিলতার কারণে। এরপরেই সিপিএম অভিযোগ তোলে রাজনৈতিক হিংসার।
এই জমি নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বাগযুদ্ধের পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও অশোক ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের অন্যতম কর্ণধার রবীন দেব দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মমতা সব ঘটনা শোনার পর এই জমি সিপিএমকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই বছরের আগস্ট মাসে এই পাঁচ একর জমি জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের নামে দেওয়ার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এরপরেই তৎকালীন পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই জমির জন্য রি-অ্যালটমেন্ট লেটার ইস্যু করেন। একই সঙ্গে ওই জমির আইনি দখলের জন্য বকেয়া টাকা পরিশোধের পর গত বছর নভেম্বর মাসে ‘পজিশন লেটার’ তুলে দেওয়া হয় জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রকে।