জ্যোতি বসুর ১০৯তম জন্মবার্ষিকীতে সল্টলেকে তাঁর নামে গবেষণাকেন্দ্রের কাজ শুরু হতে পারে

জ্যোতি বসু
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাম নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসুর স্মৃতি রক্ষার্থে কলকাতার নিউটাউনে জ্যোতি বসু গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়েছিল।

অনেক টালবাহানার পর এবার সেখানে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিপিএম। ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর ১০৯তম জন্মদিনকে ঘিরে সেখানে জ্যোতি বসুর স্মারক নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

২০১০ সালে জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ও কর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সল্টলেকের নিউটাউনে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ নামে একটি কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন বাম ফ্রন্ট সরকার। বাম ফ্রন্টের শেষ জমানায় সল্টলেকের নিউটাউনের নাম পরিবর্তন করে জ্যোতি বসু নগর করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে বাম ফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলে বাদ হয়ে যায় বাম ফ্রন্টের জ্যোতি বসু নগর গড়ার স্বপ্ন। স্বপ্নের জ্যোতি বসু নগর ফিরে যায় নিউটাউনে।

২০১৯ সালে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, জ্যোতি বসু গবেষণাকেন্দ্রের অন্যতম কর্ণধার রবীন দেব ও অশোক ভট্টাচার্য দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে। তাঁদের কাছ থেকে সব কথা শুনে সিপিএমের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন মমতা। ওই বছরের আগস্ট মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঁচ একর জমি জ্যোতি বসু গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রাজ্যের পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পাঁচ একর জমির রিঅ্যালটমেন্ট লেটার ইস্যু করেন।

গত বছর জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগে এই জমি তুলে দেওয়া হয় সিপিএমের হাতে। সিপিএম ওই জমির অধিকার পেয়ে সেই জমির সামনে লাগিয়ে দেয় সাইনবোর্ড।

জমির একাংশের মধ্যে বৃক্ষ রোপণও করে। মঙ্গলবার সকালে গবেষণাকেন্দ্রের অন্যতম নেতা রবিন দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৮ জুলাই জ্যোতি বসুর ১০৯তম জন্মদিন, আমরা সেই ভাবনা নিয়ে কাজ করছি।’

জ্যোতি বসুর এই সেন্টারে থাকবে জ্যোতি বসুর নামে একটি সংগ্রহশালা, গ্রন্থাগার, প্রদর্শনশালা, মিলনায়তন ও অতিথিদের জন্য অতিথি ভবন। এখানে জ্যোতি বসুকে নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ থাকবে। থাকবে ক্যানটিনও।
জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন ১৯৭৭ সালের ২১ জুন। কংগ্রেস

দলীয় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় বিদায় নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন জ্যোতি বসু। এরপর মুখ্যমন্ত্রী পদে আসেন সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১১ সালের জুন মাসের নির্বাচনে এই রাজ্যে বাম ফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জ্যোতি বসুর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জের বারুদি গ্রামে। তাঁর শৈশব বারুদিতে কাটলেও পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতায় বসবাস করেন। জ্যোতি বসুর বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক। জ্যোতি বসু কলকাতায় এসে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে বারুদিতে জ্যোতি বসুর পৈতৃক ভিটা ও বসতবাড়ি ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে এখনো রয়েছে। একসময় কলকাতায় জ্যোতি বসুর পরিবার বসবাস শুরু করলেও ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে এখনো বারুদিতে রয়েছে তাঁদের ঐতিহাসিক বাসভবন। বাংলাদেশ সরকার সেই বাড়ি অধিগ্রহণ করে এখন সেখানে একটি জাদুঘর তৈরি করেছে।