দলিত সমর্থন নিশ্চিত করায় এগিয়ে গেল কংগ্রেস

পাঞ্জাবের ইতিহাসে চান্নিই প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে শপথ নেন তিনি।

চরণজিৎ সিং চান্নি

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন চরণজিৎ সিং চান্নি। পাঞ্জাবের ইতিহাসে চান্নিই প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল সোমবার তাঁরই সঙ্গে শপথ নেন দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সুখজিন্দর সিং রনধাওয়া ও প্রকাশ সোনি।

ছয় মাস ধরে রাজ্য কংগ্রেসে যে তীব্র কলহ চলছিল, তার অবসানে বিধানসভা ভোটের পাঁচ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয় প্রবীণ অমরিন্দর সিংকে। পদত্যাগের পর বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, মাসের পর মাস তিনি ‘অপমানিত ও অসম্মানিত’ হচ্ছিলেন।

রাজ্য রাজনীতিতে চান্নি বিশেষ পরিচিত নাম নন। ওজনদার নেতাও নন। ৫৮ বছর বয়সী এই নেতা তিনবারের বিধায়ক। অমরিন্দর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাবেক ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিং সিধুর সঙ্গে অমরিন্দর সিংয়ের ক্ষমতার লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সিধুর পক্ষে। সিধুর পরামর্শেই চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন রাহুল গান্ধী।

রাজনৈতিক দিক থেকে চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। চান্নি প্রথম দলিত শিখ, যিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হলেন। পাঞ্জাবের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ দলিত হলেও রাজনীতির রাশ সব সময় হাতে রেখেছে জাট শিখ সম্প্রদায়। অথচ রাজ্যে জাট শিখ জনসংখ্যার হার ২০ শতাংশ। সংখ্যায় কম হলেও জমির মালিকানা জাট শিখদের হাতেই বেশি। ফলে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণকও তারা।

১৯৬৬ সালে অবিভক্ত পাঞ্জাব ভেঙে হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠিত হওয়ার পর থেকে কোনো হিন্দু কখনো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হননি। সেদিক থেকে চান্নিকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন শিখ মুখ্যমন্ত্রীদের ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো, তেমনই দলিত শিখকে রাজ্য শাসনের দায়িত্বে এনে কংগ্রেস ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করল। এই সিদ্ধান্ত শুধু পাঞ্জাবেই নয়, উত্তরাখন্ড ও উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেসের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যেহেতু দুই রাজ্যেই দলিত জনসংখ্যা বিপুল।

দলিত সমর্থন আদায়ে পাঞ্জাবের ভোটে অকালি দল কিছুদিন আগেই জোট বেঁধেছে বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে। আম আদমি পার্টি ঘোষণা করেছে, ভোটে জিতলে কোনো দলিতকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে। কংগ্রেস সেই জায়গায় চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করে দলিত সমর্থন নিশ্চিত করার দিকে এগিয়ে গেল। ৩৫ শতাংশ দলিত সমর্থনের সিংহভাগ আদায় করতে পারলে রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ী হতে হবে না।