ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তেহেলকার সাবেক সম্পাদক তরুণ

তরুণ তেজপাল
ফাইল ছবি রয়টার্স

ভারতের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক তেহেলকার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সম্পাদক তরুণ তেজপাল ‘সহকর্মীকে ধর্ষণের’ অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ২০১৩ সালে তেহেলকার এক নারী সাংবাদিক তেজপালের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। তবে ভারতের আইন অনুযায়ী ওই নারীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। আজ শুক্রবার বিবিসির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

অভিযোগকারী নারী সাংবাদিক বলেছিলেন, ২০১৩ সালে নভেম্বরে পর্যটন নগর গোয়ায় তেহেলকা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি তেজপালের নির্যাতনের শিকার হন।
আজ সকালে গোয়ার মাপুসাতে বিচারিক আদালত তরুণের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ খারিজ করে দেন। ‘ইন-ক্যামেরায়’ বিচার চলে। এ সময় কোনো সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার নেই।

পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার পাতার অভিযোগ দেয়। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে ‘বলপূর্বক আটকে রাখা, সম্ভ্রমহানির জন্য বলপ্রয়োগ, যৌন নিগ্রহ এবং ধর্ষণের’ অভিযোগ আনা হয়।

তবে তরুণ সব সময়ই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসেন। এরই মধ্যে তরুণকে গ্রেপ্তারের পর সাত মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি জামিন পান।

আজ শুক্রবার তরুণ এক বিবৃতিতে পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভেঙে পড়া জীবন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে সাত বছর আমার পরিবারের জন্য খুবই ট্রমাটিক ছিল। আমাদের ব্যক্তিগত, পেশাগত ও সাধারণ জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হয়েছে।’

তরুণ তাঁর আইনজীবী রাজবীর গোমেজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে মারা যান।

প্রসিকিউশন থেকে ১৫৬ জন সাক্ষীর নাম আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁদের মধ্যে ৭০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

ভারতের সুপরিচিত সাংবাদিকদের অন্যতম তরুণ তেজপাল। কয়েক দশক ধরে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে ২০০০ সালে তেহেলকা ম্যাগাজিন চালু করেন তরুণ। দ্রুতই তেহেলকা বেশ কয়েকটি বড় বড় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশেষ করে তেহেলকার সাংবাদিকদের ছদ্মবেশে ‘স্টিং অপারেশন’ চালিয়ে নানা অপরাধ ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা।

২০০১ সালে তেহেলকার ‘অপারেশন ওয়েস্ট এন্ড’ পুরো ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তেহেলকার সাংবাদিকরা অস্ত্র বিক্রেতা সেজে সেনা কর্মকর্তা, আমলাদের ঘুষ এবং নারীসঙ্গের প্রস্তাব দেন। এমনকি তৎকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রেসিডেন্টও সে সময় ভুয়া ওই অস্ত্র চুক্তির জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন। সেসব ঘটনা সাংবাদিকেরা গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করেছিলেন।

এসব ঘটনা প্রকাশের পর বিজেপি সরকারের ভিত নড়ে গিয়েছিল। আর জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন তরুণ তেজপাল।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে তাঁকে ‘ভারতের সর্বাধিক প্রখ্যাত সাংবাদিক’ বলে প্রশংসা করা হয়। তরুণ তেজপাল প্রকাশন সংস্থা ইন্ডিয়া লিংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর বন্ধু তালিকায় নাম রয়েছে বুকার প্রাইজ জয়ী অরুন্ধতী রায় ও নোবেল বিজয়ী ভি এস নাইপলের মতো মানুষ। তিনি তিনটি উপন্যাস লিখেছেন।

তরুণ প্রাথমিকভাবে ওই ঘটনাকে ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ এবং ‘পরিস্থিতির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে’ বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু মামলা চলতেই থাকে। তিনি এক বিবৃতি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে ওই সময়ের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে আহ্বান জানান। গোয়ার বিজেপি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে এ মামলা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

২০১২ সালে ডিসেম্বরে দিল্লিতে নির্ভয়া ধর্ষণ মামলার পর এই ঘটনা তখন বেশ আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দেয়। সমালোচকেরা বলেন, যেই তেহেলকা লিঙ্গবৈষম্য ও নারীবিদ্বেষ নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে, সেখানে তরুণের এ আচরণ ভণ্ডামি দ্বৈত চরিত্র। নারী সংগঠনগুলো, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ ও বিজেপির যুব শাখার সদস্যরা তরুণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। পরের বছরের জুলাই জামিনে ছাড়া পান। গোয়া হাইকোর্টে হেরে যাওয়ার পর তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।