নতুন সংকটে কাশ্মীর

কাশ্মীর
ছবি: এএফপি

জম্মু–কাশ্মীরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। একটি নয়, দুটি। এই জোড়া সংকট সন্ত্রাসবাদীদের তৈরি করা নয়। একটি প্রকৃতির অবদান, অন্যটির জন্য দায়ী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ২০ হাজার বিদ্যুৎ–কর্মী, যাঁরা গত শুক্রবার থেকে শুরু করেছেন অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট।

বিদ্যুৎ–কর্মীদের ধর্মঘটের ফলে সৃষ্টি হয়েছে অভূতপূর্ব বিদ্যুৎ–সংকট। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভোগান্তির এই বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে চেপে বসেছে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ। ডাল লেকসহ উপত্যকায় জমে বরফ হয়ে গেছে সব জলাধার। ফেটে গেছে পানীয় জলের পাইপ। ঘরে ঘরে বাড়ন্ত পানীয় জল। শীতের শুরুতে এমন হাল বহু বছর দেখা যায়নি। একদিকে ঠান্ডা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ–সংকট। মোকাবিলায় ডাকতে হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে জম্মু–কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের শুরু। সেই থেকে এই রাজ্যে মোতায়েন লাখ লাখ সেনানী। আড়াই বছর আগে রাজ্য ভেঙে গঠিত হয় নতুন দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আনা হয় বাড়তি সেনা। কিন্তু অসামরিক কর্মীদের ধর্মঘটের মোকাবিলায় কোনো দিন সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হয়নি। এবার তা–ও হলো। কিন্তু তাতেও জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি।

বিদ্যুৎ–কর্মীদের আন্দোলন বেসরকারীকরণের প্রতিবাদে জম্মু–কাশ্মীর বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদকে পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু–কাশ্মীরের বিদ্যুৎ পর্ষদের সম্পত্তি বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে যাবে। তা ঠেকাতে ও পর্ষদের দৈনিক বেতনভুক কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে ২০ হাজার বিদ্যুৎ–কর্মী গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। শুরু করেছেন অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট। ফলে কার্যত গোটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা।

আচমকা প্রবল শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এই বিদ্যুৎ–সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। চারদিকে হাহাকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত রোববার গভীর রাতে তলব করা হয় সেনাবাহিনীকে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে ধর্মঘটি কর্মীদের অনুরোধ করা হয় আন্দোলন তুলে নিতে। কিন্তু কর্মী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। আন্দোলন আরও জোরদার করার হুমকিও তাঁরা শুনিয়ে রেখেছেন। রাজ্যের রাজনৈতিক দলের নেতারা এই ধর্মঘটকে সমর্থন করছেন। কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি নেতৃত্ব ধর্মঘটিদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন। সমর্থনে এগিয়ে এসেছে শাসক বিজেপির অনুগত দল আপনি পার্টিও।

দুই দিন ধরে শ্রীনগরসহ সর্বত্র আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছাড়াই চলছে। সরকারি হিসাবেই উৎপাদন ব্যাহত অন্তত ৫০ শতাংশ। বেসরকারি হিসাবে আরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস, আগামী দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমবে। রোববার জম্মুতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উপত্যকার অধিকাংশ স্থানে তা শূন্য ডিগ্রির নিচে। রাজধানী দিল্লিতেও রোববার রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩ ডিগ্রির আশপাশে। ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর কাশ্মীরের বহু স্থানে তুষারপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
কাশ্মীরের মানুষের নজর এখন সেনানীদের দিকে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর দায়িত্ব সেনানীরা কতটা পালন করতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে জনজীবনের ভালো–মন্দের। গত তিন দশকে জম্মু–কাশ্মীরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে এমন দায়িত্ব ভারতের সেনাবাহিনীর ওপর বর্তায়নি।