নিথর বাবার পাশে শিশুর কান্না, এক দিনে সহায়তা ৩০ লাখ রুপি

দুর্ঘটনায় নিহত বাবার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে শিশুটির কান্নার এই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
দুর্ঘটনায় নিহত বাবার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে শিশুটির কান্নার এই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার মরদেহ। মুখটাই শুধু খোলা। সেই মুখে পরম মমতায় এক হাত রেখে আরেক হাতে নিজের কান্না মুছে যাচ্ছে তাঁর শিশু সন্তান। মৃত শ্রমিকের পাশে ক্রন্দনরত শিশুপুত্রের হৃদয়বিদারক এই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর তা কাঁপিয়ে দেয় অনলাইন দুনিয়া। দরিদ্র পরিবারটির জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় মানুষ। পরিবারটির জন্য এক দিনে ৩০ লাখেরও বেশি রুপি অর্থ সহায়তা উঠে এসেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, মৃত ব্যক্তির নাম অনিল (২৭)। তিনি পয়োনিষ্কাশন কর্মী ছিলেন। কাজ করার সময় দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত সোমবার ভারতের দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদক শিব সানি তাঁর তোলা এই ছবি টুইট করার পর তা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসিকে তিনি জানান, মরদেহটি সৎকারের জন্য রাখা হয়েছিল। সৎকারের কয়েক মিনিট আগে তিনি ছবিটি তুলেছেন। সেখানে নিহত শ্রমিকের নাম শুধু অনিল হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। যে শিশুটি বাবার মরদেহ স্পর্শ করে কাঁদছিল, তার বয়স মাত্র ১১ বছর। পরিবারটি এতই দরিদ্র যে মরদেহ সৎকারের জন্য অর্থও ছিল না। প্রতিবেশীরা সেই অর্থ জোগাড় করে দিয়েছে।

প্রতিবেদক শিব সানি বলেন, ‘আমি পয়োনিষ্কাশনকর্মীদের এমন মৃত্যুর ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি। ছবিতে পরিবারটির দুরবস্থার কথা উঠে এসেছে। পরিবারটি জানিয়েছে, মাত্র এক সপ্তাহ আগে অনিলের চার মাস বয়সী ছেলে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে পারেননি অনিল। সাত ও তিন বছর বয়সী আরও দুটি মেয়ে আছে অনিলের।’

শিব সানি ছবিটি টুইট করার পর তা সাত হাজারের বেশি শেয়ার হয়। ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এক দিনে ৩০ লাখেরও বেশি রুপি সংগ্রহ করে পরিবারটির জন্য।

শিব সানির টুইটের পর কেটো নামে ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের (অনেক মানুষের কাছ থেকে অল্প অল্প করে অর্থ সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম) সহায়তায় বেসরকারি সংগঠন উদয় ফাউন্ডেশন পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। এরপরই অবিশ্বাস্য সাড়া পাওয়া যায়।

সানি বলেন, এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এমনকি বলিউডের অভিনেতারাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছেন—কীভাবে অনিলের পরিবারকে সহায়তা করা যায়। দরিদ্র লোকেরাও ১০ রুপি করে সাহায্য দিয়েছেন। পরিবারটি সম্পর্কে লোকজন তাঁর কাছে এত কিছু জানতে চেয়েছে যে তিনি আরও তথ্যের সন্ধানে পরিবারটির কাছে গেছেন।

১১ বছর বয়সী ছেলেটি জানিয়েছে, মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে সেও কাজে যেত। বাবা যখন নর্দমায় প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর জামা-জুতা যেন চুরি না হয়ে যায়, সেটা পাহারা দিত সে।

ছেলেটি বলেছে, বাবা বলতেন, এই কাজ করার মতো এখনো তার বয়স হয়নি।

সানির আশা, পরিবারটির জন্য যে অর্থ সহায়তা এসেছে, তা দিয়ে তারা ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবে। অনিলের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে।

পুলিশ ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে, অনিলের মৃত্যুর বিষয়ে তারা তদন্ত করছে। অনিলকে বহনকারী দড়িটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না এবং নিচে নামার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া ছিল না অনিলের।

এই মাসে এ নিয়ে দিল্লিতে পয়োনিষ্কাশনকর্মী মৃত্যুর দুটি ঘটনা ঘটল। পৃথক ঘটনায় পয়োনিষ্কাশন নালি পরিষ্কার করার সময় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা না দেওয়ার কারণে ওই ঘটনায় সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, ভারতে পয়োনিষ্কাশনের কাজ করতে গিয়ে বছরে ১০০ কর্মী মারা যান। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় কর্মীদের মৃত্যু হয়।