পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দিল্লিতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ

উত্তর দিল্লির বিজেপি মেয়রের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানের পর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন। দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায়।
ছবি: রয়টার্স

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত জাহাঙ্গীরপুরীতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি জানান, এ–সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি হবে দুই সপ্তাহ পর।

একই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত বুলডোজার চালিয়ে ভাঙচুর করার বিষয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে  বিজেপি শাসিত তিন রাজ্য—উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ ও গুজরাট সরকারের কাছেও। সেই সঙ্গে নোটিশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।

জামায়াত উলেমা ই হিন্দ–এর দাখিল করা এই মামলার শুনানির সময় বৃহস্পতিবার বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ কড়া সমালোচনা করেন উত্তর দিল্লি পৌরসভার মেয়রের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ‘হাতে না পাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে বিজেপির মেয়র রাজা ইকবাল সিং প্রায় দুই ঘণ্টা উচ্ছেদ অভিযান চালু রেখেছিলেন।

বৃহস্পতিবার শুনানির সময় তা উল্লেখ করে বিচারপতিরা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। মেয়রকে নির্দেশ জানানোর পরেও ভাঙচুর চালানো সাংঘাতিক।

দেশের বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে দাঙ্গার পর উপদ্রুত এলাকায় বুলডোজার চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করেছে। উত্তর প্রদেশে শুরু হওয়া এই ‘দাওয়াই’ মধ্য প্রদেশ ও গুজরাট সাম্প্রতিক দাঙ্গার পর চালু করেছে। একইভাবে বুলডোজার নামানো হয় দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে। এই ‘অসাংবিধানিক প্রবণতা’ রুখতে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে জামায়াত উলেমা ই হিন্দ। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে জাহাঙ্গীরপুরীতে শুরু হয় ‘অবৈধ স্থাপনা’ উচ্ছেদ কর্মসূচি। সুপ্রিম কোর্ট তড়িঘড়ি স্থগিতাদেশ দেওয়া সত্ত্বেও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকে, যার ফলে সর্বোচ্চ আদালতকে তা বন্ধের জন্য দ্বিতীয়বার নির্দেশ দিতে হয়। বৃহস্পতিবার এই বিষয়কেই গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা।

বৃহস্পতিবারের শুনানিতে আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে কড়া ভাষায় পৌরসভার সমালোচনা করে বলেন, গোটা বিষয়টি করা হয়েছে বেআইনিভাবে। উচ্ছেদের জন্য দিল্লি বিজেপির সভাপতির চিঠি পাওয়ার পর রাতারাতি মেয়র তৎপর হলেন। তাঁর কাছে ওই চিঠি ছিল যেন নির্দেশ। বেছে বেছে নষ্ট করা হয়েছে গরিবদের সম্পত্তি। লক্ষ্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ।

তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে পুরসভা সৈনিক ফার্ম যাক, গলফ লিংক যাক, যেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িই অবৈধ। কিন্তু তারা সেখানে যাবে না। যাবে গরিবদের উচ্ছেদ করতে। দাভে বলেন, দিল্লিতে ৭৩১টি অবৈধ কলোনি রয়েছে। সেখানে লাখ লাখ লোকের বাস। পুরসভা কোথাও গেল না। গেল মাত্র একটি এলাকায়। কারণ, তাদের লক্ষ্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়। বেছে বেছে তাদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ও পুর কর্তৃপক্ষ দেশের সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত নয়। তারা বিশ্বস্ত বিজেপির নেতাদের প্রতি। পুর আইনের ৩৪৩ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, সম্পত্তি ভাঙচুরের আগে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। নোটিশ দিতে হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, তাঁদের বক্তব্য শুনতে হবে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।

দাভে বলেন, এমন নির্বিচার ভাঙচুর শুধু জাহাঙ্গীরপুরীতেই নয়, অন্য স্থানেও হচ্ছে। এতে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। এটা চলতে দেওয়া হলে দেশে আইনের শাসন বলে কিছু থাকবে না। আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, মধ্য প্রদেশের এক মন্ত্রী বলেছেন, মুসলমানেরা আক্রমণ করলে তাদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার নেই। সব জায়গায় বেছে বেছে তাদের ঘরবাড়িই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বিচারপতিরা জানতে চান শুধু এক সম্প্রদায়ের বাড়ি ভাঙা হয়েছে কি না। সলিসিটর জেনারেল বলেন, হিন্দুদের ‘অবৈধ’ স্থাপনাও ভাঙা হয়েছে। তা ছাড়া সবাইকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরপুরীতে এটাই প্রথম উচ্ছেদ অভিযান নয়। সেখানে জানুয়ারি মাস থেকে ফুটপাতের দখল সরানো হচ্ছে। উচ্ছেদ নিয়ে আদালতের নির্দেশও রয়েছে।