পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে: মমতাকে দিলীপের হুমকি

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এখানেও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রয়োগ করা হবে। এনআরসি করে এ রাজ্য থেকে গলাধাক্কা দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। শুধু তা-ই নয়, এই রাজ্যে বিদেশিদের যাঁরা সমর্থন করবেন, তাঁদেরও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠানো হবে বাংলাদেশে’—এমন হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

গতকাল সোমবার এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আসাম থেকে ৪০ লাখ বাঙালি তাড়ানোকে আমরা মেনে নেব না। এর বিরুদ্ধে লড়ব। শেষ দেখা দেখব।’ তাঁর ওই ক্ষোভের জবাবে গতকালই পাল্টা এই জবাব দেন দিলীপ ঘোষ।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে এনআরসি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আসাম থেকে জোর করে তাড়ানো হচ্ছে বাঙালিদের। এটা কিছুতেই মানা হবে না। আমি লড়ে যাব এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। যত দূর যেতে হয় আমি যাব। আজ আসামে ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত যেসব পরিবার বাস করছে, তাদের নামও বাদ পড়েছে। এটা কীভাবে মানা যায়? বাঙালি বলে কি তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে? অথচ এসব নাগরিক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম তোলা হয়নি; বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা মানছি না। মানব না। আমরা এই নিয়ে দরবার করব কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। দাবি জানাব এই সিদ্ধান্ত সংশোধনের।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে ৪০ লাখ মানুষের নাম ওঠেনি, তাদের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, মুসলিমসহ সব ধর্মেরই বাঙালি। অসম থেকে এদের তাড়ানো হলে বাংলার ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে।’ আরও বলেন, ‘আজ নিজ দেশেই এই ৪০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে গেল! এদের ভবিষ্যৎ কী?’

মমতার এই বক্তব্যের পর চটে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি গতকালই বিধানসভা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আসামের এনআরসি নিয়ে যেটা করা হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে।

দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর তো এখন বাংলায় থাকতে ইচ্ছে করে না। তাঁকে আর মানুষ এখন সহ্য করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে এখন এক কোটি বিদেশি আছেন। আমরা কাউকে ছাড়ব না।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে দিলীপ বলেন, ‘আপনি তো ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। কয়বার আপনি এই বাংলায় আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দাবি করেছেন? পাকিস্তান থেকে গুজরাট আর রাজস্থানে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের আইন করে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কী করেছেন?’

দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পর তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘দিলীপ ঘোষের মনোবাসনা পূর্ণ হবে না। কারণ, তারা কোনো দিনই এই রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’

গতকাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় আসামের ৪০ লাখ বাঙালির নাম না ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস ও বাম দলের বিধায়কেরা। তাঁরা বিজেপিকে ‘বাঙালিবিরোধী’ বলে আখ্যায়িত করেন।

বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এনআরসি নিয়ে শিগগিরই বিধানসভায় সর্বদলীয় প্রস্তাব আনা হবে। বিজেপি বাঙালিবিরোধী। রবীন্দ্রনাথকেও অপমান করেছে। তাই আসামের ঘটনা নিয়ে অবিলম্বে সর্বদলীয় প্রস্তাব আনা হোক।’

সভায় সুজন চক্রবর্তীর এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান। বাম ও কংগ্রেসের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের পৌরমন্ত্রীমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘আসামের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে এই রাজ্যে। মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। তাই আমাদের সংসদীয় প্রতিনিধিদল আসামে যাবে। কথা বলবে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীও যাবেন আসামে।’ তিনি আরও বলেছেন, আসামে এখন ভোটের রাজনীতি চলছে। মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার রাজনীতি করছে বিজেপি।

আসামের এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হয় গতকাল। তালিকায় নিজেদের নাম তুলতে আসামে বসবাসকারী ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ঠাঁই হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের। অর্থাৎ আসামে বসবাসকারী ৪০ থেকে ৪১ লাখ মানুষ ‘ভারতীয়’ হিসেবে ওই তালিকায় নাম তুলতে পারেননি।

তবে এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকাশিত তালিকা শুধু খসড়া। এটি চূড়ান্ত কিছু নয়। যাঁরা তালিকায় ঠাঁই পাননি, তাঁরা আবেদন করতে বা আপত্তি জানাতে পারবেন। তালিকায় নামের ব্যাপারে দাবি ও আপত্তির কার্যক্রম আগামী ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হবে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।