পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির ডুবন্ত নৌকাকে তীরে তুলতে পারবেন কি অমিত শাহ

অমিত শাহ
ফাইল ছবি

গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় ভারতের বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মনঃকষ্টে সেই যে কলকাতা ছাড়লেন, আর ফিরে আসেননি দীর্ঘ এক বছরেও।

অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট আশা নিয়ে পা রেখেছিলেন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে। স্বপ্ন ছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে হারিয়ে রাজ্যের সিংহাসনে বিজেপিকে বসানো। নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকার গঠন করবে—ভাবনা মাথায় রেখে অমিত এই বাংলায় প্রচার চালান। কিন্তু হেরে যান মমতার কাছে। বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে অমিত শাহর দল বিজেপি জেতে মাত্র ৭৭টি আসনে। আর মমতার দল তৃণমূল জেতে ২১৩টিতে। এই পরাজয়ের পর আর ফিরে আসেননি অমিত শাহ কলকাতায়। কারণ, ২০২১–এর প্রচারে অমিত শাহ জোর দিয়ে বলেছিলেন, বিজেপিই জিততে চলেছে, জিতবে।

অমিত শাহর কলকাতায় এত দিন না আসায় ও বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ায় এই রাজ্যে দলটির ৭৭ বিধায়ককে নিয়ে সাজানো বাগান ভাঙতে শুরু করে ‘একে একে নিভিল দেউটি’র মতো। সাজানো সেই বাগান এখনো ভাঙছে। রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির বিধায়কসংখ্যা ৭ জন কমে ৭০–এ নেমে গেছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির জয়ের নৌকা ধীরে ধীরে ডুবতে বসেছে। দলত্যাগ করছেন বিজেপির শুধু বিধায়ক নন, নির্বাচনের আগে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন আখের গোছাতে, তাঁরাও নিজেদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বেশির ভাগই ফিরে গেছেন তৃণমূলে।

এ অবস্থায় মমতার বিরোধীশূন্য রাজ্য গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে বিজেপির জয়ের নৌকা এখন ডুবতে বসেছে। আর এর কারিগর স্বয়ং মমতাই। মমতার লক্ষ্য, ‘বিজেপিকে ভেঙে দাও, বিজেপির নৌকা ডুবিয়ে দাও, এ রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্ব মুছে দাও।’ তৃণমূলের এসব প্রত্যয়ের মধ্যেই আগামী ৪ মে এ রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। তিনি বৈঠক করবেন বিজেপির নেতাদের সঙ্গে। জনসভা করবেন। দলকে চাঙা করতে রাজনৈতিক ‘টনিক’ দেবেন।

অমিত শাহ ৪ মে রাতেই পা রাখছেন কলকাতায়। ৫ মে যাবেন উত্তরবঙ্গে। এর আগে ৫ মেতেই উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ও কোচবিহার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের তিন বিঘায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপর তিনি দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়িতে বিজেপি আয়োজিত এক সমাবেশে যোগ দেবেন। রাতেই ফিরবেন কলকাতায়।

৬ মে অমিত শাহ কলকাতায় উপস্থিত থেকে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেবেন। বৈঠক করবেন বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতা, দলের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে অমিত শাহ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার পথ বাতলাবেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার টনিক দেবেন। প্রয়োজনে সাংগঠনিক পদে পরিবর্তন আনতে পারেন। তারপর ফিরে যাবেন রাজধানী দিল্লিতে।

গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের পর যদিও বিজেপিতে এখনো চলছে ভাটার টান; চলছে বিজেপির অন্দরমহলে অশান্তি, ক্ষোভ, প্রতিবাদ। দল ছাড়ার হুমকি। সেই সঙ্গে রাজ্যের শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস, অত্যাচারের নানা ঘটনা। এসব কতটুকু সামাল দিতে পারবেন অমিত শাহ, সেই প্রশ্ন রয়েছে এই রাজ্যের রাজনীতিকদের মধ্যে।

এখন একই ধারায় তৃণমূলের অন্দরমহলেও চলছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ, আর তা উচ্চপর্যায়ের নেতা থেকে সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও। তবে দলীয় কোন্দল যেটা শক্ত হাতে এখনো দমন করার শক্তি রাখেন মমতা ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সেই শক্তি আজ বিজেপির নেই। বরং বিজেপি দলীয় কোন্দলে জেরবার হচ্ছে। নেতাদের মধ্যে ঐক্যের সুর নেই; আছে বিচ্ছেদের সুর। একের বিরুদ্ধে অন্যের কুকথার তরজা।

তাই তো রাজনৈতিক মহলে এখন এই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে, তবে কি অমিত শাহর ‘বাণী’ মেনে এক হতে পারবে বিজেপি, বিজেপির ডুবন্ত নৌকাকে কি তুলতে পারবেন তীরে অমিত শাহ? নাকি বিজেপি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলত্যাগের স্রোতে দলের নৌকার সলিলসমাধি হবে? দলত্যাগের স্রোত আরও দীর্ঘ হবে? তবু বিজেপির নেতা–কর্মীরা অমিত শাহর ভোকাল টনিকের অপেক্ষায়। যদি তাঁর ভোকাল টনিক বিজেপির মরা গাঙে বান ডেকে আনে! সেই স্বপ্ন নিয়ে এখন অমিত শাহর কলকাতায় আসার প্রহর গুনছে বিজেপির নেতা থেকে সাধারণ কর্মীরাও।