পশ্চিমবঙ্গে দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গড়তে প্রস্তাব পাস রাজ্য বিধানসভায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হবে। ২০১১ সালে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ১০ বছর পর রাজ্য বিধানসভায় এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হলো। গতকাল মঙ্গলবার এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
৩৪ বছর বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসে মমতা বলেছিলেন, এই রাজ্যের আইনসভার উচ্চকক্ষ হবে বিধান পরিষদ আর নিম্নকক্ষ হবে বর্তমানের রাজ্য বিধানসভা। যেমনটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার জন্য রয়েছে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভা।
কিন্তু একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও মমতা আর এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এবার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে মমতা নতুন করে ঘোষণা দেন, রাজ্যে দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গড়া হবে। বিধানসভায় ২৯৪ আসন থাকলেও বিধান পরিষদে কত আসন থাকবে, তা এখনো জানানো হয়নি।
১৯৫২ সালের ৫ জুন ৫১ জন সদস্যকে নিয়ে এই রাজ্যে প্রথম বিধান পরিষদ গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ সেই বিধান পরিষদের অবলুপ্তি ঘটে। এই বিধান পরিষদ গঠন করার জন্য গতকাল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভায় এই নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ভোটাভুটিতে বিধান পরিষদ গড়ার পক্ষে ভোট পড়ে ১৯৬টি আর বিপক্ষে পড়ে ৬৯টি। বিজেপির পক্ষ থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়। বিজেপির দুই বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও মিহির গোস্বামী আপত্তি তুলে বলেন, দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। করোনার সংক্রমণে মানুষ মরছে। অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। মানুষের পেটে খাবার নেই। কাজ নেই। বেকার সমস্যা চরমে। ডিএ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে এখনই এই রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন করার যুক্তি কী?
বিধানসভা অধিবেশনের পর বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করার এক নতুন প্রয়াস। শুভেন্দু এ কথাও বলেছেন, পরাজিতদের পুনর্বাসিত করার জন্য পেছনের দরজা দিয়ে তাঁদের আইনসভায় ঢোকানোর এই প্রচেষ্টা মমতার। তিনি আরও বলেন, ‘এই বিধান পরিষদ পুষতে পাঁচ বছরে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি রুপি খরচ হবে। তাই আমরা এই বিলের বিপক্ষে।’
রাজ্য বিধানসভায় এই বিল পাস হলেও তা আইনে রূপান্তর হচ্ছে না শিগগিরই। এই বিল বিধানসভায় পাসের পর তা অনুমোদনের জন্য যাবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে। তিনি অনুমোদন দিলে যাবে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কাছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এই বিল প্রথমে পেশ হবে লোকসভায়, তারপর রাজ্যসভায়। এই দুই আইনসভা থেকে এই বিল পাস হওয়ার পর তা যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই সেই বিল আইনে পরিণত হবে।
এই বিধান পরিষদ পশ্চিমবঙ্গে না থাকলেও ভারতের উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, বিহার, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও জম্মু-কাশ্মীরে বলবৎ আছে। নেই ২৩টি রাজ্যে।
এই বিলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিধান পরিষদ কি সংবিধানবহির্ভূত? রাজ্যের কাজে গতি আনতে আমরা আইনসভার দুই কক্ষ চাই। বিধান পরিষদ ও বিধানসভা। তবে বিধানসভার ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও আপত্তি তুলেছেন। তিনি এই বিধান পরিষদ বিলের বিরুদ্ধে। আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এই বিলের আপত্তি জানিয়ে বলেন, বিধান পরিষদ গঠনের নামে এবার মমতা সাদা হাতি পুষতে চাইছেন। তিনি বলেন, রাজ্যবাসীর স্বার্থ ও রাজ্যের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করে কেবল সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাব পাস করিয়েছে। মমতা বলেছেন, বিধানসভায় সিপিএম ও কংগ্রেস শূন্য হলেও তাদের প্রতিনিধি নেওয়া হবে এই বিধান পরিষদে।