পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট কি ভেঙে যাচ্ছে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় একটানা ৩৪ বছর দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করা বামপন্থীদের জোট বামফ্রন্ট কি এবার ভেঙে যাচ্ছে? নতুন করে এ প্রশ্ন উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে। জোটের অন্যতম শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লক প্রশ্ন তুলেছে, এখন কি আর বামফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?
১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে রাজ্যের ৭টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল এ বামফ্রন্ট। দলগুলো হলো—সিপিএম, সিপিআই, ফরোয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, মার্ক্সিস্ট ফরোয়ার্ড ব্লক, আরসিপিআই ও বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস নিয়ে এ জোট গঠন করা হয়। পরে অবশ্য বামফ্রন্টের শরিক আরও বেড়ে যায়। নতুন শরিক হয় ডিএসপি, সমাজবাদী পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি।
১৯৭৭ সালের ২১ জুন পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসেছিল এ জোট। তখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু। এর আগে এ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা।
বামফ্রন্ট একটানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে রাজ্য শাসন করেছে। ২০১১ সালে বামফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। হিসাবে এখন বামফ্রন্টের বয়স ৪৪ বছর। কিন্তু সম্প্রতি বামফ্রন্টের শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লক বলতে শুরু করেছে, ভেঙে দেওয়া হোক বামফ্রন্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার বামফ্রন্টের দুই শরিক সিপিএম ও ফরোয়ার্ড ব্লকের এক বৈঠকে এসব কথা তুলেছেন ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। গতকালের ওই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রশ্ন তোলার পর ফরোয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যানকে। তাতে বলা হয়েছে, যেভাবে সিপিএম বামফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, বামফ্রন্টে আর অন্য শরিকের প্রয়োজন নেই। সিপিএম একাই এখন বামফ্রন্টে খবরদারি করছে। শরিকদের না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, জোটের প্রার্থিতা ঠিক করছে। আইএসএফ বা ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধছে। এতে মনে হচ্ছে, এখন বামফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে। ফরোয়ার্ড ব্লক সরাসরি জানতে চেয়েছে, এখন আর বামফ্রন্ট রেখে কী হবে?
এ প্রশ্ন তোলার অন্যতম কারণ হলো, ফরোয়ার্ড ব্লক আইএসএফের সঙ্গে জোট গড়ার বিরোধিতা করেছিল। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আইএসএফ একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি। কিন্তু দলটির এ মন্তব্যের গুরুত্ব দেয়নি সিপিএম।
এ জোট প্রথম ধাক্কা খায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ওই বছর এ রাজ্যের লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি বামফ্রন্ট, যা ছিল বামফ্রন্টের ইতিহাসে প্রথম। অথচ ওই নির্বাচনে কংগ্রেসও জিতেছিল দুটি আসন। আর বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন। বামফ্রন্ট আবার ধাক্কা খেল এ বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। ২৯৪ আসনের এ বিধানসভায় বামফ্রন্ট একটি আসনেও জিততে পারেনি। বামফ্রন্টের ইতিহাসে বিধানসভায় শূন্য আসনের ঘটনা এই প্রথম। জিততে পারেনি অবশ্য কংগ্রেসও। তবে ৭৭ আসন জিতেছে বিজেপি।
এ পরিস্থিতিতে ফরোয়ার্ড ব্লকের বামফ্রন্ট ভেঙে দেওয়ার গানে সুর মিলিয়েছে আরএসপিও। আর এসব কথা ও বক্তব্য নিয়ে আগামীকাল শনিবার কলকাতার সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে বামফ্রন্ট শরিকদের এক বৈঠক ডেকেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ওই বৈঠকের পরই হয়তো জানা যেতে পারে বামফ্রন্টের ভবিষ্যৎ।