পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন: ৭ম দফায় ভোটের মাঠে তারকাদের মেলা
চারজন মন্ত্রী, ডজনখানেক নামী রাজনীতিক, চলচ্চিত্র তারকা, অর্থনীতিবিদ, লড়াকু ছাত্রনেতা—পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আজ সোমবারের সপ্তম দফার নির্বাচনে এমন অনেক তারকা প্রার্থী লড়াইয়ের ময়দানে। কড়া নিরাপত্তা এবং করোনাবিধি মেনে সকাল সাতটায় শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ২৯৪ আসন। ভোট হচ্ছে আট দফায়। আজ সপ্তম দফার ভোট নেওয়া হচ্ছে পাঁচ জেলার ৩৪ আসনে। ৩৬টি আসনে ভোট নেওয়ার কথা থাকলে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর আসনের দুই প্রার্থী করোনায় মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট গ্রহণ হচ্ছে না। আজ দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ কলকাতায় ভোট হচ্ছে। শেষ বা অষ্টম দফার ভোট নেওয়া হবে ২৯ এপ্রিল চার জেলার ৩৫টি আসনে। জেলা চারটি হলো মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও উত্তর কলকাতা। আর আগামী ২ মে এই আট দফা নির্বাচনের ফলাফল একযোগে ঘোষণা করা হবে।
আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে ১১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকেন্দ্রে। ভোটার ৮১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯ জন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩৬ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৪টি, কংগ্রেস ১২টি এবং বাম দল ১০টি আসন। বিজেপি কোনো আসন পায়নি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ৩৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৪টি আসনে, বিজেপি ১৬টি আসনে এবং কংগ্রেস ৪টি আসনে। বাম দল কোনো আসনে এগিয়ে থাকতে পারেনি।
আজকের এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। ৩৪টি নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজকের ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে গোটা ভোটকেন্দ্র এলাকায় ৬২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। আর রাজ্য পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৩৩৮ জন পুলিশ সদস্য।
করোনার প্রবল সংক্রমণের মধ্যে চলছে আজকের নির্বাচন। গতকাল রোববার রাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে মারা গেছেন ৫৭ জন। এর মধ্যে ১৮ জন কলকাতায় মারা গেছেন। আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাসহ এ রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৮৮৯ জন জন। এর মধ্যে কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৯ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছে ১০ হাজার ৯৪১ জন।
আজকের এই সপ্তম দফার নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রীসহ চলচ্চিত্র তারকা, সমাজকর্মী প্রার্থীরা লড়ছেন। তবে সেই তুলনায় চলচ্চিত্র তারকা প্রার্থী আজ কম। প্রার্থী বেশি রাজনীতি অঙ্গনের। চলচ্চিত্র অঙ্গনের প্রার্থী দুজন। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।
আজকের তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের বিদায়ী পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি (বালিগঞ্জ), পৌরমন্ত্রী ও কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম (কলকাতা বন্দর), বিদায়ী বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (ভবানীপুর), বিদায়ী আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক (আসানসোল উত্তর), কলকাতা পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র পরিষদ দেবাশীষ কুমার (রাসবিহারী), আসানসোলের সাবেক মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (রানীগঞ্জ), রাজনৈতিক নেতা ইদ্রিস আলী (ভগবানগোলা)। এ দফায় সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জাকির হোসেন (জঙ্গিপুর) ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (আসানসোল দক্ষিণ)।
বিজেপির প্রার্থীরা হলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী (বালুরঘাট), ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান সুব্রত সাহা (রাসবিহারী), আসানসোল পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারী (পাণ্ডবেশ্বর), বিশিষ্ট পোশাকপরিকল্পক অগ্নিমিত্রা পাল (আসানসোল দক্ষিণ) এবং অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (ভবানীপুর)।
বাম দল সিপিএমের উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে খ্যাতনামা চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম (বালিগঞ্জ) এবং দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের সহসভাপতি ঐশী ঘোষ (জামুড়িয়া)।