প্রস্তাবিত রামমন্দিরের আশপাশে জমি কেনার হিড়িক

সরজু নদীর তীরে অযোধ্যা
ফাইল ছবি : ফাতিমা জাহান

ভোটের আগে বিড়ম্বনা এড়াতে উত্তর প্রদেশ সরকার অযোধ্যায় জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিল। উত্তর প্রদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব নভনীত সেহগল গত বুধবার রাতে জানান, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও বহুজন সমাজ নেত্রী মায়াবতী।

দুই দিন ধরে অযোধ্যায় প্রস্তাবিত রামমন্দিরের আশপাশে জমি কেনাবেচায় এই কেলেঙ্কারির খবর সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এ ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে।

মহেশ যোগী প্রতিষ্ঠিত মহাঋষি রামায়ণ বিদ্যাপীঠ ট্রাস্ট নামে এক সংগঠন মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ২১ বিঘা জমির মালিক। অভিযোগ, ওই জমি তারা দলিতদের কাছে থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। উত্তর প্রদেশের আইন অনুযায়ী দলিত পরিবারের জমি বর্ণহিন্দুদের হস্তান্তর করা যায় না।

সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই অযোধ্যায় জমি কেনাবেচার হিড়িক শুরু হয়। মন্দির তৈরির কাজ যত এগোচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে সংলগ্ন এলাকায় জমি কেনার আগ্রহ। মন্দির হয়ে গেলে অযোধ্যা চলে আসবে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের পর্যটন মানচিত্রে। দারুণভাবে বাড়বে হোটেল-ধর্মশালার চাহিদা। এই ব্যবসায়িক কারণই জমি কেনাবেচার প্রধান তাগিদ। তা করতে গিয়ে লঙ্ঘিত হয়েছে রাজ্যের আইন।

গতকাল বুধবার এ নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সদস্য মল্লিকার্জুন খাড়গে। কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ না দিয়েই সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেন, ‘হিন্দুরা সত্যের পথে চলেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মের আড়ালে সব ছিনিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে।’

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালার অভিযোগ, ‘বিজেপির লোকজন অযোধ্যা শহরে খোলাখুলি জমি লুটে নেমেছে।’ আম আদমি পার্টির দাবি, ‘গুরুতর জমি জালিয়াতির তদন্ত জরুরি’। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি দল ও সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তদন্তই একমাত্র উপায়। উত্তর প্রদেশে ভোটের আগে বিরোধী প্রচারে রাশ টানতেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ তদন্তের নির্দেশ দেন।

এদিকে রাজ্য সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বহুজন সমাজ নেত্রী মায়াবতী। আজ বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দুই নেত্রীই পৃথকভাবে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত এই ঘটনার তদন্ত নিজের হাতে নেওয়া।

মায়াবতী বলেন, বিজেপি ও সরকারের রথি-মহারথীরা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সবাই জমি কিনেছেন ২০১৯ সালে ৯ নভেম্বর অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের পর।

রামমন্দির হয়ে গেলে অযোধ্যা চলে আসবে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের পর্যটন মানচিত্রে। দারুণভাবে বাড়বে হোটেল-ধর্মশালার চাহিদা। এই ব্যবসায়িক কারণই জমি কেনাবেচার প্রধান তাগিদ। তা করতে গিয়ে লঙ্ঘিত হয়েছে রাজ্যের আইন।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, রাজ্য সরকারের তদন্তের নির্দেশ ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। সুপ্রিম কোর্টের উচিত এই কেলেঙ্কারির তদন্ত করা। কারণ, ২ কোটি টাকার জমি কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রথমে ৮ কোটি ও পরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে ‘রামমন্দির ট্রাস্ট’–এর কাছে, যা ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এত দ্রুত কোনো জমির দাম বাড়েনি! প্রিয়াঙ্কা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে। সেই মন্দিরসংলগ্ন জমি কেলেঙ্কারির তদন্তও সর্বোচ্চ আদালতের করা উচিত।

অযোধ্যায় মন্দির-মসজিদ বিতর্কিত কাঠামোর চারপাশে জমি কেনা শুরু হয় ১৯৯০ সালের পর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্থানীয় দরিদ্র দলিতদের কাছ থেকে জোর করে অথবা নিতান্ত কম দামে ওই সব জমি কেনে। মহেশ যোগী প্রতিষ্ঠিত মহাঋষি রামায়ণ বিদ্যাপীঠ ট্রাস্ট নামে এক সংগঠন মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ২১ বিঘা জমির মালিক।

অভিযোগ, ওই জমি তারা দলিতদের কাছে থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। উত্তর প্রদেশের আইন অনুযায়ী দলিত পরিবারের জমি বর্ণহিন্দুদের হস্তান্তর করা যায় না।

অথচ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রেতাদের প্রায় সবাই বর্ণহিন্দু। তাঁরা রাজ্যের শাসক দল বিজেপির অনুগত এবং সরকারি কর্মচারী। এমন ধরনের ১৪ জন ক্রেতার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক ও মেয়র, উপজেলা শাসক, মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট, বিভাগীয় কমিশনার ও তাঁদের আত্মীয়রা। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের পদস্থ আধিকারিকেরাও এই জমি লুটের সঙ্গে যুক্ত। বিজেপি এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেনি।