‘বহিরাগত’ তত্ত্ব থেকে ইউটার্ন মমতার, উপনির্বাচনে প্রার্থী ‘বিহারি বাবু’

বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব তুলে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছিলেন। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূলকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের আশায় সোচ্চার ছিল বিজেপি। সে লক্ষ্যে বিজেপি এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রচারে এনেছিল বিজেপির নেতা-নেত্রীদের।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পর্যন্ত এসেছিলেন। এটা মেনে নিতে পারেনি তৃণমূল। তৃণমূল আঞ্চলিক দল হলেও সেভাবে দেশব্যাপী রাজনৈতিক খুঁটি বসাতে পারেনি। তাই তৃণমূল নির্বাচনের প্রচারে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব সামনে আনে। স্লোগান তোলে, বহিরাগত নয়, ভূমিপুত্ররাই হটিয়ে দেবেন বহিরাগতদের। এ কারণে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে প্রচারে কড়া অবস্থান নেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গে একটি লোকসভা ও একটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন হচ্ছে—বর্ধমানের আসানসোল লোকসভার আসন এবং দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা আসন। আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় আসন শূন্য হয়। বালিগঞ্জের বিধায়ক ও মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির মৃত্যুতে সেই আসনও শূন্য হয়। দুটি শূন্য আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সেই উপনির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য গতকাল রোববার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। আসানসোলে লোকসভা আসানের প্রার্থী করা হয় বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহাকে। আর বালিগঞ্জে প্রার্থী করা হয় সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়কে। বাবুল সুপ্রিয় এর আগে বিজেপির সাংসদ ছিলেন; ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। কিন্তু মোদি সরকার গত বছর মন্ত্রিসভায় চার নতুন মুখ আনায় বাদ পড়ে যান বাবুল সুপ্রিয়। আর এ দুঃখে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর যোগ দেন তৃণমূলে। এবার সেই বাবুল সুপ্রিয়কে সাংসদ পদে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় বিধায়ক পদে। তাঁর ছেড়ে আসা আসানসোলের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহাকে।

শত্রুঘ্ন সিনহা ‘বিহারি বাবু’ হিসেবে ভারতে পরিচিত। তাঁর জন্ম বিহারের পাটনায়, ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই। শত্রুঘ্ন সিনহা ছিলেন বিজেপির আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ; রাজ্যসভার সদস্যও। সামলেছেন একাধিক মন্ত্রণালয়। শেষ পর্যায়ে বিজেপির সঙ্গে বনিবনা না হলে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে।

এবার তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটেই তিনি লড়ছেন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে। যদিও রাজ্যে প্রচার ছিল আসানসোল আসনে তৃণমূল মনোনয়ন দিতে পারে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে। সায়নী ঘোষ আবার ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ। অথচ তৃণমূল নিজের রাজ্যের কাউকে প্রার্থী না করে প্রার্থী করেছে, তাদের ভাষায়, এক ‘বহিরাগত’কে। তিনি শত্রুঘ্ন সিনহা। আর এ নিয়ে বহিরাগত ইস্যু নতুন করে চাঙা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে।