বাতিল ধারায় হাজার মামলার জট, কেন্দ্রকে নোটিশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
ছবি: রয়টার্স

ছয় বছর আগে আইনের বাতিল ধারায় সহস্রাধিক মামলা দায়েরের ঘটনায় বিস্মিত ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। কী করে এমন হতে পারে এবং এরপর কী করণীয়, সে বিষয় জানতে চেয়ে সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠাচ্ছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে এটির জবাব দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রোহিনটন ফলি নরিম্যান, বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে দায়ের করা এক মামলায় আজ সোমবার এই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ পায়।

বেসরকারি সংস্থা পিপল ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) পক্ষে করা মামলায় বলা হয়, ২০০০ সালে প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬(ক) ধারা সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালে খারিজ করে দিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত বলেছিলেন, ওই ধারা ভাসা ভাসা, অসাংবিধানিক ও খোলা মনে কথা বলার পরিপন্থী। ছয় বছর ধরে যে ধারার অস্তিত্বই নেই, সেই ধারায় সহস্রাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

পিইউসিএলের আইনজীবী সঞ্জয় পারেখ তথ্য দাখিল করে বলেন, খারিজ হয়ে যাওয়া ৬৬(ক) ধারায় এখনো ২২৯টি মামলা চলছে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ৩০৭টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মামলা চলছে ৫৭০টির।

রাজ্যের হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রে দায়ের হয়েছে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ও মামলা। মোট ৩৮১। এরপর ঝাড়খন্ড (২৯১), উত্তর প্রদেশ (২৪৫) ও রাজস্থান (১৯২)। এ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে আসামে (৫৯), অন্ধ্র প্রদেশ (৩৮), পশ্চিমবঙ্গ (৩৭), দিল্লি (২৮), তেলেঙ্গানা (১৫), কর্ণাটক (১৪) ও তামিলনাড়ুতে (৭)। বিচারপতি নরিম্যান মন্তব্য করেন, ‘যা চলছে তা মারাত্মক ও বিস্ময়কর! আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠাব। ’

খারিজ করা ৬৬(ক) ধারায় বলা হয়েছিল, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে কোনো মিথ্যা, অপমানজনক, সম্মানহানিকর তথ্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেই অপরাধের সাজা তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ শ্রেয়া সিংঘল মামলায় ধারাটি বাতিল করে দেন সুপ্রিম কোর্ট।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলেন, ধারাটি বাতিল হলেও মূল আইনে সেটি রয়েছে। আইনের একেবারে তলায় ফুটনোট দিয়ে তা বাতিলের কথা লেখা রয়েছে। এ জন্য মূল আইনে সংশ্লিষ্ট ধারার পাশেই বলে দেওয়া দরকার, সেটি খারিজ হয়ে গেছে। পুলিশ অত খুঁটিয়ে সবকিছু লক্ষ করে না।

আবেদনকারীদের দাবি, খারিজ হওয়া ধারার কথা সব রাজ্যের হাইকোর্ট মারফত জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে আর অপব্যবহার না হয়। পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হোক, যাতে এ ধারায় অভিযোগ দায়ের না করে।