বিচিত্র দেয়াললিখনে প্রচার জোরদার কলকাতায়

বিজেপির প্রতীক ও পতাকার আদলে রং করা হয়েছে একটি গরুকে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিজেপির প্রতীক ও পতাকার আদলে রং করা হয়েছে একটি গরুকে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো দেয়াললিখন। বিশেষ করে নির্বাচন এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল উঠেপড়ে লাগে দেয়াললিখনে। আর তাতেই উঠে আসে নানা কথা, নানা লেখা, নানা ব্যঙ্গচিত্র। কখনো ব্যঙ্গ ছড়া, কখনো ব্যঙ্গ কবিতা। এ চিত্র শুধু আজ কলকাতায় নয়, রাজ্যজুড়েই।

এসব দেয়াললিখন নানা হাসির খোরাকও জোগায়। কখনো ব্যঙ্গচিত্র দেখে মানুষ হাসিও থামাতে পারে না। নেতাদের নানা কথা নিয়ে আঁকাও হয় নানা ব্যঙ্গচিত্র। মোট কথা, এই বৈশিষ্ট্য এখনো বিরাজমান কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে। তবে এ কথাও ঠিক, এখানকার নির্বাচনে প্রার্থী বা দলীয় পোস্টারের চেয়ে প্রচারের আলোতে বেশি চলে আসে ব্যঙ্গ ছড়া, ব্যঙ্গ কবিতা, ব্যঙ্গচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ প্রথা। এতে লাভবান হচ্ছেন চিত্রশিল্পীরা।

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে চলছে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে চলছে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নির্বাচনের মৌসুমে চিত্রশিল্পীদের সুযোগ আসে অর্থ আয়ের। আর এসব শিল্পী বিভিন্ন রঙের ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তোলেন ব্যঙ্গচিত্র আর দেয়াললিখনকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও অর্থের বিনিময়ে এই দেয়াললিখনের জন্য নিয়োগ করেন নামী আঁকিয়েদেরও।

বিজেপিবিরোধী তৃণমূলের প্রচার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিজেপিবিরোধী তৃণমূলের প্রচার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

একসময় এই দেয়াললিখনে এই রাজ্যে এগিয়ে ছিল বাম দল। নির্বাচন এলেই তারা নানা কারুকার্যমণ্ডিত দেয়াললিখনের মাধ্যমে প্রচার চালাত। তখন এই বাম দলে ছিল ব্যঙ্গচিত্র আঁকার কারিগর, ব্যঙ্গ কবিতা লেখার কবিও। এখন অবশ্য সেই দিন নেই বাম দলের। তবুও তারা ইতিহাসের পথ ধরে এখনো লিখে চলেছে নানা ধরনের দেয়াললিখন। তবে এখন অবশ্য বাম দলকে টপকে উঠে এসেছে তৃণমূল। তারা ব্যঙ্গচিত্র আর কবিতার কারিগর ডেকে আঁকিয়ে নিচ্ছে দেয়াল। ব্যঙ্গাত্মক স্লোগান লিখে ঘায়েল করছে বিরোধীদের।

সিপিএমের তৃণমূলবিরোধী প্রচার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সিপিএমের তৃণমূলবিরোধী প্রচার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার তাদের ব্যঙ্গচিত্রে যেমন ঠাঁই পেয়েছে রাফাল, জিএসটি ইস্যুসহ নানা ইস্যু। আবার বিরোধী দলের দেয়াললিখনে অভিযোগ করা হচ্ছে, মমতার একনায়কতন্ত্র, ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হরণের নানা ছবি। এবার অবশ্য শুধু দেয়াল নয়, গাছপালা, পশু–প্রাণীদের শরীরে রংতুলি দিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতীক এঁকে ভোটের প্রচারও চালানো হচ্ছে।

বিজেপি ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিজেপি ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রচারে দেয়ালে কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র আঁকার প্রচলন শুরু হয় সেই ১৯৫৭ সাল থেকে। ভারতের দ্বিতীয় সাধারণ বা লোকসভা নির্বাচন থেকে। সেই সময় কংগ্রেসবিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ও প্রফুল্ল ঘোষের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র আঁকা শুরু করে দেয়াল ঘিরে। ১৯৬২ সাল থেকে বাম রাজনৈতিক দল এ রাজ্যে নির্বাচনের প্রচারের হাতিয়ার করে এই ব্যঙ্গচিত্র, ব্যঙ্গ কবিতা ও স্লোগানকে। শুধু তা–ই নয়, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের যে ২১ মাস দেশে জরুরি অবস্থা ছিল, এরপরের নির্বাচনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়েও এ রাজ্যে দেয়াললিখন হয়েছে। ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে চলছে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে ব্যঙ্গ করে চলছে দেয়াললিখন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এখন অবশ্য এই ব্যঙ্গচিত্র আঁকা, ব্যঙ্গ কবিতা দিয়ে দেয়াললিখন আর সীমাবদ্ধ নেই বাম দলের মধ্যে। দেয়াললিখনে এখন এগিয়ে গেছে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসসহ অন্যান্য দলও। সবারই লক্ষ্য, কীভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কী আনবেন দেয়ালে রঙের তুলিতে। তারই প্রতিযোগিতা চলছে দেয়ালজুড়ে।

জাতি স্বর চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি গানকে মমতার বিরুদ্ধে প্যারোডি করে প্রচার চালানো হচ্ছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
জাতি স্বর চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি গানকে মমতার বিরুদ্ধে প্যারোডি করে প্রচার চালানো হচ্ছে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি