বিড়ালের কারণে বেঁচে গেল নবজাতকটি

কে বা করা শিশুটিকে হত্যার উদ্দেশ্যে নালায় ফেলে যায়
ছবি মুম্বাই পুলিশের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

রাস্তার পাশে একটি জায়গায় কয়েকটি বিড়াল একসঙ্গে বেশ হাঁকডাক করছিল। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই তা চলছিল। একপর্যায়ে উৎসুক স্থানীয় লোকজন সেখানে যান। গিয়ে দেখতে পান পাশেই নালায় পড়ে আছে এক নবজাতক।

ঘটনাটি গত রোববার ভারতের মুম্বাইয়ের। নবজাতকটি মেয়ে। তার বয়স পাঁচ দিন। কে বা কারা নবজাতকটিকে মেরে ফেলতে নালায় ফেলে যায়। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।

রাজাওয়াদি হাসপাতালের চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, নবজাতকটি ভালো আছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এ ঘটনার তদন্ত চললেও পুলিশ অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে, ভারতে বেশির ভাগ পরিবারই ছেলেসন্তান চায়। বংশের উত্তরাধিকারী মনে করা হয় ছেলেদের। এখানে মেয়েরা সামাজিক বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোতে মেয়েদের আর্থিক বোঝা হিসেবে মনে করা হয়।

গত রোববার পুলিশ যখন সেখানে পৌঁছায়, দেখতে পায় নালার মধ্যে পড়ে আছে ক্রন্দনরত নবজাতকটি। তার পরনে পাতলা একটি শার্ট ছিল, যা তখন নালার ময়লা পানিতে একাকার।

দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে দ্রুত সেখান থেকে তুলে কাপড়ে জড়িয়ে নেন ও হাসপাতালে নিয়ে যান।

পুলিশ কনস্টেবল শীতল সোনাওয়ানে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমরা যখন শিশুটিকে তুলি, তখন তার শরীর প্রচণ্ড ঠান্ডা ছিল। হাতগুলো নীল হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাকে পরিষ্কার করার জন্য কিছুটা গরম পানি ও কাপড় চাই।’

খবর পেয়ে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে পুলিশ
ছবি মুম্বাই পুলিশের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট বিদ্যা ঠাকুর বিবিসি মারাঠিকে বলেন, চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্য ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। কয়েক দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

দুই বছর আগেও এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বারেলি শহরে একটি মাটির পাত্রে জীবন্ত কবর দেওয়া এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

২০১৬ সালের শীতকালে দিল্লির রাজধানী নয়াদিল্লিতে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে পরিত্যক্ত এক নবজাতককে পাওয়া যায়। সেই বছরের জুনে গঙ্গা নদীতে ভাসমান এক কাঠের বাক্স থেকে মেয়েশিশুকে উদ্ধার করেন এক মাঝি।

মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, ভারতের এই ছেলেসন্তানপ্রীতির কারণে গত কয়েক দশকে লাখ লাখ মেয়েভ্রূণ নষ্ট করা হয়েছে।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে মেয়েশিশুদের রক্ষায় এর বিরুদ্ধে ‘ক্রুসেড’–এর আহ্বান জানান। মনমোহনের পর নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে কন্যাশিশুদের হত্যা বন্ধ করতে ভারতীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।