ভারতে বাড়ছে সংক্রমণ, কোথাও রাত্রীকালীন কারফিউ, কোথাও বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনার টিকা নিতে অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা। মুম্বাই, ভারত, ৪ জানুয়ারি
ছবি: এএফপি

ভারতে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। দেশটিতে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরের পর দেশটিতে এক দিনে এত সংক্রমণ শনাক্ত হলো।

ভারতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১২৪ জন আর ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি রোগী রয়েছেন দেশে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করেছিল গত ৭ মে। ওই দিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। এরপর সংক্রমণ কমতে শুরু করে। সবশেষ ডিসেম্বরের শেষ দিকে দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজারে নেমে আসে। কিন্তু করোনার নতুন ধরন অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দেশটিতে আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।

সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতে রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রাজধানী দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের চলমান শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকদের শিগগিরই কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

ভারতের আরেক গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ বাড়ছে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে। সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিহানমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের প্রধান ইকবাল সিং চাচাল বলেন, মুম্বাইয়ে করোনার সংক্রমণ ২০ হাজার ছাড়ালে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, প্রতিদিন ২০ হাজার আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া ও তাঁদের অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

এদিকে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে গোয়া রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল সোমবার সেখানে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩৮৮টি। সংক্রমণ শনাক্তের হারও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের সূত্র বলেছে, শিগগিরই সেখানে কারফিউ জারি করা হবে।
গোয়ায় এখনো কারফিউ কার্যকর না হলেও পাঞ্জাবে কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে।

পাঞ্জাব সরকার আজ এক আদেশে উল্লেখ করেছে, রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সেখানে কারফিউ জারি থাকবে। রাজ্যের পানশালা, বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, স্পা, জাদুঘর ও চিড়িয়াখানায় এখন থেকে ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ মানুষ প্রবেশ করতে পারবে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ টিকা নেওয়া থাকতে হবে। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

এ ছাড়া পাঞ্জাবের স্কুল–কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পাঞ্জাব সরকার। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস চলবে। আর মেডিকেল ও নার্সিং কলেজগুলো খোলা থাকবে। পশ্চিমবঙ্গেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লি, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, ওডিশা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেলেঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৮ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
পাঞ্জাব সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, যাঁরা করোনার পূর্ণাঙ্গ টিকা নিয়েছেন, তাঁরাই এখন থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন। তবে যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের কী হবে, তা এখনো জানানো হয়নি।

এদিকে ভারতের বিহার রাজ্য নতুন করে ৭২ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সেখানে দেড় শ জনের বেশি চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলেন।