মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্ব থাকবে কি না, জানা যাবে রোববার
নন্দীগ্রামে হেরেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদ টিকিয়ে রাখতে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে লড়েছেন তিনি। ভোট গ্রহণ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আগামীকাল রোববার প্রকাশিত হবে ভোটের ফল। এদিন দুপুর নাগাদ জানা যাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হচ্ছে কি না। নাকি নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন। একই সঙ্গে এদিন মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর ও সমশেরগঞ্জের উপনির্বাচনের ফলও প্রকাশিত হবে।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী তৃণমূল। তবে এবারের উপনির্বাচনে আশানুরূপ ভোট পড়েনি। পরিসংখ্যান বলছে, ভবানীপুরে ভোট দিয়েছেন ৫৩ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোটার। গত মে মসে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে এ আসনে ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এতে মমতার জয়ে বিরোধীপক্ষের চেয়ে ভোটের ব্যবধান প্রত্যাশার চেয়ে কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিজেপির প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ভবানীপুরে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী। জয়ের বিষয়ে তিনিও পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী।
রোববারের ভোট গণনা নিয়ে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রাখা হয়েছে ভবানীপুর। গণনা কেন্দ্রের বাইরে এদিন ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। জমায়েত নিষিদ্ধ থাকায় গণনা কেন্দ্রের এক শ মিটারের মধ্যে পাঁচজনের বেশি মানুষ সমবেত হতে পারবেন না। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর আসনে জয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি পদত্যাগ করলে আসনটি শূন্য হয়।
এদিকে ভবানীপুরের ভোটের ফলের আগে মমতা ব্যস্ত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশের জেলা বাঁকুড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশের জলমগ্নতা নিয়ে। টানা বৃষ্টি, বাঁধ ভেঙে যাওয়া, প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড এবং তাপ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা দামোদর ভ্যালি করপোরেশনের (ডিভিসি) পানি ছাড়ার কারণে এ জেলাগুলো প্লাবিত হয়েছে বলে মমতা জানিয়েছেন। তবে ডিভিসি বলেছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে জানিয়েই বাড়তি পানি ছাড়া হয়েছে।
বিজেপি সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ
বিজেপির সদ্য নিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে গতকাল শুক্রবার দলটির রাজ্য শাখার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় দেওয়া বক্তব্যে সুকান্ত মজুমদার মমতার কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তৃণমূল কংগ্রেস কেন ব্যবহার করছে? অথচ বিজেপি জয় শ্রীরাম বললেই যত আপত্তি।
সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন, ‘দেশভাগের সময় যাঁরা বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছেন, তাঁরা বারবার বলেন, তাঁদের অনেক কিছুই সেখানে ছিল। তবে তাঁরা পালিয়ে এলেন কেন? তাঁরা পালিয়ে এলেন, কারণ তাঁদের জমি অন্যের হাতে চলে যাচ্ছিল। দেশ চলে গেলে ধর্ম ও সংস্কার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর এদিন প্রথম ভাষণ দেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘মমতার সঙ্গীরা সব সময় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ মিনি পাকিস্তান হয়ে যাবে। আমরা পশ্চিমবঙ্গকে মিনি পাকিস্তান হতে দেব না…হিন্দুদের এ আবাসস্থল আমরা রক্ষা করবই।’
গত বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির রাস্তায় হেঁটে মমতার কাছে পরাজিত হয়েছে বিজেপি, এমনটাই বক্তব্য দলের ভেতরে-বাইরের অনেক সমালোচকের। কিন্তু এ রাজ্যে হিন্দুত্ববাদের রাস্তা যে বিজেপি আগামী দিনেও ছাড়বে না, তা নতুন রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে।