মোদির জনপ্রিয়তার কারণ সংখ্যালঘু বিদ্বেষ

আকার প্যাটেল

ভারতীয় রাজনীতিতে ‘মোদি–যুগ’ শুরুর ঠিক আগে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের পক্ষে তা হবে বিপর্যয়।’ কেন ‘বিপর্যয়’, মোদি-জমানায় কীভাবে ভারতীয় অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানসিকতা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির বদল ঘটেছে, প্রাইস অব দ্য মোদি ইয়ার্স বইয়ে সরকারি-বেসরকারি তথ্য, ভাষ্য ও পরিসংখ্যানের মধ্য দিয়ে তা বিধৃত করেছেন সাংবাদিক, লেখক ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেল। প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি অকপট। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রাইস অব দ্য মোদি ইয়ার্স বইটি আপনার চোখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাত বছরের শাসনের মূল্যায়ন। এখনো ক্ষমতাসীন তিনি। জনপ্রিয়ও। দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্তি হতেও বাকি আরও তিন বছর। এই সময়ে এই বই লেখার তাগিদ কী?

আকার প্যাটেল: এই সময়ের মধ্যে যত তথ্য-উপাত্ত আহরিত, তা পর্যাপ্ত। এর মধ্য দিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণাও সৃষ্টি হয়েছে। মনে হয়েছে, সেই ধারণা প্রকাশযোগ্য। ধারণাটা হলো, ২০১৪ সাল থেকে নেতৃত্বের কারণে ভারত পদে পদে ভুগছে। যেমন অর্থনীতি। ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নামতে শুরু করেছে। মনে রাখতে হবে, প্রবৃদ্ধির এই অবনমন ঘটতে শুরু করেছে কোভিডের দুই বছর আগে থেকে। সরকারি তথ্যেই তা স্পষ্ট। ২০১৪ সালে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম ছিল, আজ তারা ভারতকে টপকে গেছে! বাংলাদেশের এই সাফল্য চমকপ্রদ। অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু আমাদের ভাবা দরকার, কেন এমনটা হলো? এই বই অবনমনের সেই কারণগুলো ধরতে চেয়েছে। আমার চোখে আজকের ভারতের প্রধান সমস্যা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘ব্যর্থতা’র খতিয়ান দিতে গিয়ে এই বইয়ে আপনি ৫৯টি আন্তর্জাতিক সূচক তুলে ধরেছেন। মাত্র দুটি ক্ষেত্র ছাড়া প্রতিটিতেই ২০১৪ সালের তুলনায় ভারতের অবস্থা খারাপ হয়েছে। এই ব্যর্থতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদি কেন জনপ্রিয় এবং অজেয়?

আকার প্যাটেল: আপনি কী কাজ করছেন, আপনার অবদান কতটা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে—এসবের ওপর রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা আর নির্ভরশীল নয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কর্মসংস্থান হু হু করে কমেছে। কিন্তু তাতে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। ২০১৪ সালে দেশে যত মানুষ চাকরি করতেন, ৫ কোটি কম মানুষ আজ চাকরি করছেন। মোদির শাসনকালে ভারতের শ্রম যোগদানের হার এক–পঞ্চমাংশের বেশি কমেছে। অর্থাৎ ১৫ বছরের বেশি বয়সী যাঁরা কাজ করেন বা খুঁজছেন, তাঁদের হার ৫০ শতাংশ থেকে কমে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রম যোগদানের হারের ক্ষেত্রে এটা সর্বনিম্ন। তালেবান শাসন শুরুর আগে আফগানিস্তানও এর চেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল। অন্যদিকে ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প’র (‘মনরেগা’, যার উদ্দেশ্য গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারদের বছরে অন্তত ১০০ দিনের মজুরি নিশ্চিত করা) বহর ২০১৪ সালে যা ছিল, তা বেড়েছে চার গুণ। এসব সরকারি তথ্য। এর মানে, লোকে কাজ চাইছে অথচ কাজ নেই। আরও বিস্ময়ের, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর দেশের জিডিপিতে উৎপাদন শিল্পের অবদান ১৬ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে! অথচ ওই একই সময়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের জিডিপিতে উৎপাদন শিল্পের অবদান বেড়েছে। এর মানে, অবদান কীভাবে বাড়ানো যায়, মোদি তা বুঝতে পারেননি! ব্যর্থতা চূড়ান্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও মোদি জনপ্রিয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিজেপির মনোভাবের দরুন। ওই মনোভাব রাজনৈতিক দিক থেকে এক বিপুল জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাজপেয়ী-আদভানির সময়েও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ছিল বিজেপির প্রধান চালিকা শক্তি। মোদির আমলে সেই ভূমিকা বদলেছে। এখন মোদি মুখ্য, সংঘ গৌণ। সংঘ হয়ে উঠেছে মোদির অনুসরণকারী। এই ধারণা ঠিক হলে কী সেই কারণ?

আকার প্যাটেল: আরএসএস এতকাল ধরে যে স্বপ্ন দেখে এসেছে, মোদি তা সাকার করেছেন। মুসলমানদের রাজনৈতিক দিক থেকে পরাস্ত করা, তাদের প্রান্তবাসী করে দেওয়া, আইন ও নীতির বেড়ি পরানো—এই স্বপ্ন আরএসএস দেখেছে। মোদি তা করতে পেরেছেন বলেই তিনি আরএসএসের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন। আজকের ভারতে ২৮ রাজ্যের কোথাও একজন মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী নেই। ১৫ রাজ্যে একজনও মুসলমান মন্ত্রী নেই। ১০ রাজ্যে একজন করে মুসলমান মন্ত্রী রয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশের দায়িত্ব সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। লোকসভায় বিজেপির ৩০৩ সদস্যের মধ্যে একজনও মুসলমান নন। ২০১৪ সালে বিজেপির যে ২৮২ জন লোকসভায় জিতেছিলেন তাঁদের একজনও মুসলমান ছিলেন না। বিজেপির এই নির্বাচনী জাতিবিদ্বেষকে হিন্দু সমাজের এক বড় অংশ সমর্থন করছে।

অন্য দিকে রাষ্ট্র কী করছে? রাজ্যে রাজ্যে আইন এনে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। প্রমাণের দায়ভার বর্তেছে অভিযুক্তের ওপর। এক মুসলমানের ১০ বছর কারাবাস হয়। অভিযোগ, তিনি তাঁর কন্যার বিয়েতে গরুর মাংস খাইয়েছিলেন। পুলিশ প্রমাণ করতে না পারলেও বিচারক শাস্তি দেন এই বলে যে ওটা যে গোমাংস ছিল না, সেই প্রমাণ ওই মুসলমান পিতাকেই দিতে হবে। সেই রায় পরবর্তী সময়ে বদলানো হয় ঠিকই, কিন্তু আইনে এই বৈষম্য ইদানীং ছড়াছড়ি। ২০১৮ সালের পর ৬টি বিজেপিশাসিত রাজ্যে হিন্দু-মুসলমানের বিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি আদালতকে জানান তিনি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছেন, সেই সাক্ষ্যও পর্যাপ্ত ধরা হবে না। পরিবারদের জবরদস্তি না করার প্রমাণ দিতে হবে। এ ধরনের আইন অপ্রয়োজনীয়। বিজেপির ‘লাভ জিহাদ’ নামক অবাস্তব তত্ত্ব আরএসএস অনুমোদন করছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি লিখেছেন মোদি ‘নির্ণায়ক’ ও ‘স্বচ্ছ’। স্বচ্ছই যদি হবেন, তা হলে নোট বাতিল বা লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত দল ও সরকারের সবাইকে অন্ধকারে রেখে একা নেন কী করে?

আকার প্যাটেল: ‘স্বচ্ছ’ এই কারণে, উনি কী এবং কী করতে চান, কাউকে লুকোন না। মন্ত্রিসভার কে কী মনে করবেন, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। সংসদীয় গণতন্ত্রের সম্মিলিত দায়িত্ববোধের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেন না। কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মোদির কূটনীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের নিয়ে আপনি অনেক আলোচনা করেছেন। পাকিস্তান নীতির দোদুল্যমানতার উদাহরণ দিয়েছেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কহানির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দায়ী করেছেন। বিশেষ করে নেপাল ও বাংলাদেশের উল্লেখ করেছেন।

আকার প্যাটেল: দৃশ্যত সুসংহত প্রতিবেশী নীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করেছে হিন্দুত্ববাদের ঘৃণা ও মুসলমান ভীতি। অনেক দিন ধরেই ভারত ধরে নিয়েছে, পাকিস্তানের দিক থেকে আসা সন্ত্রাসবাদই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রাথমিক বিপদ। সেই কারণে প্রতিবেশী আমাদের সঙ্গে যা করছে, আমাদেরও তা–ই করা উচিত। এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য নীতি, যা তথাকথিত ‘ডোভাল ডকট্রিন’ (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল)। বছরের পর বছর ধরে ভারত তাই কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদকে আমল দিচ্ছে। এর ফলে লাদাখে চীনের দিক থেকে আসা বিপদ বুঝতে পারেনি। আজ সর্বত্র একটা আশঙ্কার বাতাবরণ বিরাজমান। কারণ, ভারতের কোনো কৌশলই নেই। মোদি এবং তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার একটা তত্ত্বগত কাঠামো তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ফাঁকে চীন ঢুকে পড়ছে। ভারত চায় না তার আঙিনা ও ছত্রচ্ছায়া পেরিয়ে চীনের দিকে বাংলাদেশ ঝুঁকে পড়ুক। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপির এক সহজাত অবজ্ঞা রয়েছে। নেপালের ক্ষেত্রে ভারত তাদের সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নাক গলিয়েছিল। ২০১৫ সালের অবরোধ তারই ফল। সেই অবরোধ নেপালিদের ক্রোধ উদ্রেককারী।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ‘সোনালি অধ্যায়’। ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগের ক্ষেত্র উন্মোচিত হচ্ছে। অন্যত্র সেই প্রতিবিম্ব কতটা?

আকার প্যাটেল: মানুষে মানুষে যোগাযোগ এখনো ক্ষীণ। এই যোগাযোগ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অথবা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো নয়। দুর্বল। মোদির আমলে ভারতে মুসলমানদের সঙ্গে কী ঘটছে, কারও অজানা নয়। গোটা পৃথিবী জানে। বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করেন, তা ক্ষতিকারক। পাশাপাশি ২০১৪ থেকে ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি কমেছে। চীনের দিকে বাংলাদেশের ঝুঁকে পড়ার সেটাও একটা কারণ। ঝুঁকবেও। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ভারতের দ্বিগুণ।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বইয়ে আপনি সিএএ এবং এনআরসির প্রভাব নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা ক্ষতিকর হয়ে থাকলে কীভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে?

আকার প্যাটেল: প্রধানমন্ত্রী মোদি বা বিজেপির দ্বারা উন্নতি সম্ভব নয়। কারণ, মুসলমান বিদ্বেষ জন্মগতভাবে তাদের জিনে রয়েছে। এটাই তাদের দর্শনগত প্রাথমিকতা, যা বদলানোর নয়। এর ফলে বাংলাদেশের দিকে ভারত যতই হাত বাড়াক, তা কৃত্রিম হবে। সম্পর্কের প্রাথমিক সমস্যা তাতে কাটবে না। সম্পর্কটা লেনদেনভিত্তিকই থেকে যাবে, সভ্যতামূলক হবে না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুবার বাংলাদেশিদের উইপোকা বলেছেন। প্রথমবার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন তৎকালীন মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার নিন্দা করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালে সিএএ পাস করানোর আগে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজর তা এড়ায়নি। সিএএ পাস হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভারত সফর বাতিল করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যত বিক্ষোভ হয়েছে, তার মধ্য দিয়েই বোঝা যায় সাধারণ বাংলাদেশির মনোভাব কেমন এবং মোদি-যুগে ভারতে কী চলছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি মনে করেন, চীনের দিকে বাংলাদেশের ঝোঁকার বিষয়ে ভারত সন্দিহান। সন্দেহমুক্ত হতে ভারতের কী করণীয়?

আকার প্যাটেল: নিজের সীমান্তে চীনের প্রভাব ঠেকানোর ক্ষমতা ভারতের নেই। প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে তা ঠেকানো পরের কথা। ভারতের তুলনায় চীনের জিডিপি ছয় গুণ বেশি। তিস্তা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের খুব একটা করার কিছু নেই। কারণ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। এটা সরকারের বড় সমস্যা, যা মনমোহন সিং মেটাতে পারেননি, নরেন্দ্র মোদিও নন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: উত্তর প্রদেশের ফল যা–ই হোক, ২০২৪ সালে মোদিকে ভোটে লড়তে হবে। আপনার চোখে এই ‘পাহাড় প্রমাণ ব্যর্থতার’ পর মোদি আবার সরকার গড়লে ভারতের হাল কী রকম হবে?

আকার প্যাটেল: একই রকম থাকবে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। অতীতের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। বিশ্রী ধরনের বেকারত্ব এবং উৎপাদন হ্রাস অব্যাহত থাকবে। আইন ও নীতির সাহায্যে সংখ্যালঘু নিপীড়ন, বিশেষত মুসলমানদের, বাড়বে। কারণ, সেটা এখন সমাজের হাতে উঠে এসেছে। ভারতীয় গণতন্ত্র একটা ইতিবাচক শক্তি হিসেবে সভ্য সমাজে পরিগণিত হতো। সেই বহুত্ববাদী চরিত্রের স্খলন আগামী এক দশকে রোখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব কমবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব প্রতিহত করাও কঠিন হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তা হলে এই মোদি-যুগে ভারত কী অর্জন করল, আর কীই–বা হারাল?

আকার প্যাটেল: অর্থনীতিতে ভারত তার গতিপথ হারিয়েছে। সবটাই যে মোদির জন্য নয়, সে তর্ক করাই যায়। কিন্তু তর্কাতীতভাবে সত্য যে তিনি অবস্থা আরও খারাপ করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, মোদি সমস্যাটাই স্বীকার করতে চান না। ফলে শোধরানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। সামাজিক ক্ষেত্রের ক্ষতিও ভয়াবহ। ভারত বিভক্তই থাকবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দৃষ্টি থাকবে নেতিবাচক। ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ও আধুনিক দেশ হিসেবে ভারতের পরিচয় নষ্ট হয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদি এই দেশে এক জাতিগত জাতীয়তাবাদের (এথনো ন্যাশনালিজম) জন্ম দিয়েছেন, যার লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ ভারতীয়রা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হলে মোদি মতবাদ কি শেষ হয়ে যাবে?

আকার প্যাটেল: হ্যাঁ। কারণ, মোদি মতবাদ প্রকৃত কোনো মতবাদই নয়। কিন্তু মোদি–যুগ দ্রুত শেষ হলেও উচ্চ আয়বিশিষ্ট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য যে সময় প্রয়োজন, তা পর্যাপ্ত নয়। সমাজের যা ক্ষতি হয়েছে, তা প্রজন্মব্যাপী হবে কারণ, রাষ্ট্র হিন্দুত্ববাদী জনতার ক্ষমতায়নে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এই বইয়ের শেষে আপনার প্রশ্ন, হিন্দুত্ববাদের ভালোটা কী? কেনই বা হিন্দুত্বকে বরণ করতে হবে? এটাই কি তবে ভবিতব্য?

আকার প্যাটেল: না। ভাগ্যের ওপর ছেড়ে না দিয়ে প্রত্যেকের উচিত একে প্রতিহত করা।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

আকার প্যাটেল: আপনাকেও।