রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের অপসারণ দাবি তৃণমূলের

জগদীপ ধনকর

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্মে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অপসারণ চেয়ে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাব পেশ করেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাজ্যসভার মহাসচিবকে লেখা এক চিঠিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং দলটির অন্যতম মুখপাত্র শুখেন্দু শেখর রায় এই দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যসভা চালানোর জন্য যে নীতি-নির্দেশনা আছে, তার অন্তর্গত বিধি ১৭০-এর আওতায় এই দাবি করেছেন সুখেন্দু শেখর।

বিধি ১৭০-তে কোনো প্রস্তাব পেশ করার অর্থ হলো, সভার কাছে সর্বসম্মতিক্রমে নির্দিষ্ট বিষয় মেনে নেওয়ার আবেদন জানানো। অর্থাৎ সভা বলবে যে তারা সর্বসম্মতিক্রমে কোনো একটি বিষয় মেনে নিচ্ছে বা নিচ্ছে না। এই ধরনের আবেদন ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পর সভার কাছে করা হয়েছিল। রাজ্য সভায় তা অনুমোদিতও হয়েছিল।

চিঠিতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়ে সুখেন্দু শেখর লিখেছেন, ‘এই সভা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপালের কাজকর্ম সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে। তিনি রাজ্যের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন এবং নির্বাচিত সরকারের সাংবিধানিক পদমর্যাদার সদস্যদের এবং নীতির সমালোচনা করছেন। প্রচারমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে রাজ্যপাল এই কাজ করছেন। এ কারণে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মহামহিমের (হিজ এক্সেলেন্সি) কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধের অর্থ, রাজ্যপালকে সরানোর উদ্দেশ্যে সংবিধানের ১৫৬ ধারা ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আবেদনের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস বুঝিয়ে দিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই মুহূর্তে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সম্পর্ক কতটা তিক্ত।

একাধিক প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে সংঘাত চরমে উঠেছে। সরকার চালাতে গেলে একাধিক বিষয়ে রাজ্যপালের অনুমতি লাগে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রশাসনিক ফাইলে রাজ্যপালকে স্বাক্ষর করতে হয়। সপ্তাহখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এই ফাইলগুলো আটকে রেখেছেন। তবে রাজ্যপাল তা অস্বীকার করেন।

কথা উঠেছে রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন নিয়োগের বিষয় নিয়েও। রাজ্যপাল সেই নিয়োগের সম্মতি দিচ্ছেন না বলে পদটি পূর্ণ করা যাচ্ছে না—এমন অভিযোগ রাজ্য সরকারের। জবাবে রাজ্যপাল বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বর্ণনা করে জানান, রাজ্য সরকার পূর্ণ সময়ের চেয়ারপারসন নিয়োগ করতে চায় না।

এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক দিয়ে বলেন, রাজ্যপাল সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী এমন লেখালিখি করছেন, যা আপত্তিজনক। রাজ্যপাল রাজ্যের পুলিশ প্রধান এবং মুখ্য সচিবকে হুমকি দিয়েছেন বলেও মমতা অভিযোগ করেন।