রাজ্যের সুনাম নষ্ট করতেই ১০ হত্যা, দাবি তৃণমূলের

বীরভূমের বকটুঁই গ্রামের ১০টি বাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়
ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বকটুঁই গ্রাম এখন থমথমে। ১০ হত্যার ঘটনার পর গ্রামছাড়া হয়েছে গ্রামের মানুষ। অনেকে পালিয়ে গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর শাসক তৃণমূল বলেছে, রাজ্য সরকারের সুনাম নষ্ট করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের উপপ্রধান ভাদু শেখ নিহত হওয়ার পর গত সোমবার রাতে ওই এলাকায় তাণ্ডব চালায় মৃত তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। রাতেই ওই গ্রামের ১০টি বাড়িতে আগুন লাগায়। পুড়ে মারা যায় ১০ জন। এর মধ্যে রয়েছে দুই শিশু ও ছয় নারীর দেহ। পুলিশ আরও বলেছে, ঘটনার পর ওই এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আগুনে পুড়ে মৃত আটজনের দেহ গতকাল দাফন করা হয়েছে। এই মৃতদেহ শনাক্ত করেন জনৈক আনোয়ারুল হক। তিনি নিজেকে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনার পর পুরো রাজ্যে রাজনৈতিক উতোর–চাপান শুরু হয়েছে। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা। তবে শাসক দলের দাবি, এ ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক।
তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এটা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। রাজ্য সরকারের সম্মানহানি ঘটানোর জন্য এই আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন, এটা গণহত্যা। এই গণহত্যার তদন্ত করা হোক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই বা এনআইএ দিয়ে। রাজ্য সরকার তো এখন ব্যস্ত এই ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য।

কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, এটা গণহত্যা। রাজ্যবাসীকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে এই রাজ্যে রাস্ট্রপতির শাসন জারি করা হোক। তিনি এ কথাও বলেছেন, দিল্লিতে গিয়ে তিনি রাস্ট্রপতির কাছে এ আবেদনই করবেন। তিনি আরও বলেছেন, সাপ পালন করলে সেই বিষধর সাপের ছোবলেই মারা যায় সাপুড়ে। এবার তৃণমূলও শেষ হবে তাদের পালা বিষধর সাপের ছোবলে।

এদিকে আজই বিজেপি কেন্দ্রীয় কমিটি এই গণহত্যার ঘটনা সরেজমিন তদন্তের জন্য কেন্দ্র থেকে পাঁচ সদস্যের একটি দল পাঠিয়েছে। দলে রয়েছেন সাংসদ ব্রজলাল, সত্যপাল সিং এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার প্রমুখ। যদিও রামপুরহাটে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ প্রতিবাদ মিছিল করেছে বাম দল।

বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হলেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি আগুন লাগানোর পর প্রথম বলেছিলেন, শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লেগে টেলিভিশন ফেটে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে অবশ্য অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, স্টোভ ফেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে দুর্ঘটনাস্থলের নমুনা সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে বকটুঁই গ্রামে উপস্থিত হয়েছে ফরেনসিক দল। এসেছেন পুলিশের কর্তারাও।

এদিকে আজ সকালে সিপিএমের প্রবীণ নেতাসহ বাম ফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল বকটুঁই গ্রামের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ওই গ্রামের মধ্যেই আটকে দেয়। পরে অবশ্য নেতারা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সবিস্তার শুনে নেন হত্যাকাণ্ডের কথা।