শুরু হচ্ছে আগরতলা বইমেলা, মূল আকর্ষণ বাংলাদেশ

ভারতের ত্রিপুরায় আগরতলা বইমেলার প্রস্তুতি তুঙ্গে। ছবি: দেবাশিস রায়।
ভারতের ত্রিপুরায় আগরতলা বইমেলার প্রস্তুতি তুঙ্গে। ছবি: দেবাশিস রায়।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার উমাকান্ত মাঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে ৩৪তম আগরতলা বইমেলা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী হাশেম খান। উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
মেলায় এবারও মূল আকর্ষণ বাংলাদেশ। দশ বছর ধরে বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরাই আগরতলা বইমেলায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করছেন। বিশিষ্ট কবি রাতুল দেববর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, আগরতলা বইমেলায় প্রতিবারই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বাংলাদেশের বই। বাংলাদেশের নন্দিত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদসহ অন্য লেখকদের বই দারুণ বিক্রি হয়। কলকাতার লেখকদের বদলে ঢাকার লেখকদেরই আগরতলার পাঠকেরা বেশি পছন্দ করে বলেও মন্তব্য করেন রাতুল দেববর্মণ।
ত্রিপুরা বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক শুভব্রত দেব মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ১৯৮০ সালে দাঙ্গার পরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জোরদারের উদ্দেশ্যেই আগরতলায় ১৯৮১ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে চালু হয় বইমেলা। তাঁর দাবি, ভারতে কলকাতার বাইরে বাংলা বইয়ের এত বড় মেলা আর হয় না। এই মেলায় আবার কলকাতার লেখকদের থেকে বাংলাদেশের লেখকদের কদর অনেক বেশি বলেও শুভব্রত উল্লেখ করেন। তাঁর নিজের প্রকাশনা অক্ষর পাবলিকেশন থেকেও হায়াৎ​ মামুদ, ইমদাদুল হক মিলন, শামিম রেজাদের বইও নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি অক্ষরের গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের জাকির তালুকদার। গিল্ড সম্পাদক আরও জানান, বইমেলায় গিল্ডভুক্ত ২৬টি স্থানীয় প্রকাশনার প্রায় শ-তিনেক বই প্রকাশিত হবে। গিল্ডের অপর সদস্য দেবানন্দ দাম প্রথম আলোকে জানান, এবারও বাংলা ছাড়াও ককবরক, মণিপুরী ও ইংরেজি ভাষায় বই প্রকাশিত হচ্ছে। বইকে ঘিরে উত্সবে মেতে উঠতে চলেছে আগরতলা। বাংলাদেশ থেকেও বহু বইপ্রেমী এই মেলায় এবারও আসবেন বলে দেবানন্দ দাম আশা প্রকাশ করেন।
মেলা কমিটির সদস্য আকবর আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, মেলায় বাংলাদেশ থেকে এবারও গোটা চারেক স্টল আসবে। তবে কলকাতার নয়া উদ্যোগ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ভালো ভালো বই। ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের বইমেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কবি রাতুল দেববর্মণ অবশ্য জানালেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার এই মেলার প্রথম দু-চার ৫ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের ভালো ভালো বই ফুরিয়ে যায়। ফলে চাহিদা থাকলেও পাঠকেরা বঞ্চিত হন ভালো বই পড়ার সুযোগ থেকে।
ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট লেখক অরুণোদয় সাহা প্রথম আলোর কাছে আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি বইমেলাকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উৎ​সাহ থাকলেও কলকাতা বা ঢাকার মতো এই মেলাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়নি।

ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত এবারের ৩৪ তম বইমেলার স্লোগান ‘ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী সহিষ্ণু ভারতবর্ষ আমাদের ঐতিহ্য’। বইমেলার দ্বিতীয় রোববার ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এবারও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পরিচালক শান্তনু দেববর্মা। এই মেলা চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।