শুরু হচ্ছে ইন্দো-বাংলা মৈত্রী সেতু

বর্ষার পরই ফেনী নদীর ওপর ভারত-বাংলা মৈত্রী সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু হবে। ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের ডৌলবাড়ি থেকে ওপারে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় পর্যন্ত ৪১২ মিটার দূরত্ব এই সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হবে।

সেতুটি চালু হলে ত্রিপুরার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এ লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ সেতু নির্মাণে সম্মত হয়। পুরো খরচটাই বহন করছে ভারত।

সাব্রুম থেকে চট্টগ্রাম বন্দর মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে। আর আগরতলার দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক বিনোদ কুমার শ্রীবাস্তব জানান, এর মধ্যেই সেতু নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়েছে মেসার্স দীনেশচন্দ্র আর আগরওয়াল ইনফ্রাকম প্রাইভেট লিমিটেডকে। তারাই নির্মাণ করবে ৩০ মিটার চওড়া এই আন্তর্জাতিক সেতু। প্রাথমিকভাবে মৈত্রী সেতু বলা হলেও এখনো সরকারিভাবে নাম ঠিক হয়নি।

সীমান্তের দুই পারে ৪১২ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং সঙ্গে ১ হাজার ৪৭৬ মিটার সংযোগকারী সড়ক নির্মাণের জন্য ৮২ কোটি ৬৭ লাখ রুপির দরপত্র অনুমোদিত হয়। ফেনীর ওপর মূল সেতুটি হবে ১৮০ মিটারের। দুই পারেই থাকছে ৯০ মিটার করে। সেতুর সঙ্গে থাকছে ২৩২ মিটারের সহযোগী সেতু বা ভায়াডাক্ট। ভায়াডাক্টের ১৭৭ মিটার থাকছে বাংলাদেশের সীমান্তে। আর ভারতের দিকে থাকছে ২৭ দশমিক ৫ মিটার। তবে অ্যাপ্রোচ রোড হচ্ছে ভারতেই বেশি। ১ হাজার ১৯৩ মিটার হবে ভারতে। আর বাংলাদেশে অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২৮৩ মিটার।

এপারে মোট ৩ দশমিক ৬ হেক্টর জমি লাগছে। ৪৯টি বিদ্যুতের পোল, ৯১টি ঘর, ২ হাজার ৮৫০টি গাছ পড়েছে এই জমিতে। নিয়ম মেনে সেই বাধা টপকেই সেতু নির্মিত হচ্ছে। ওপারে অবশ্য জমির সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন শ্রীবাস্তব। কারণ, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন বলছে, সেতুর জন্য নির্ধারিত পুরো জমিটাই খাসজমি।

আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই সাব্রুমে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জিতেন চৌধুরীর সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেন নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

আজ মঙ্গলবার এই সেতু প্রসঙ্গে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জিতেন চৌধুরী বলেন, এই সেতু নির্মিত হলে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই উপকৃত হবে। ত্রিপুরার তো অর্থনৈতিক চেহারাই বদলে যাবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হবে ত্রিপুরা। তা ছাড়া বন্দর ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশেরও আয় বাড়বে। সম্পর্কও মজবুত হবে।

ফেনীর ওপর আন্তর্জাতিক সেতু নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার শাখাওয়াত হোসেনও। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই সেতু নির্মিত হলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। সব দিক বিবেচনা করেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা সেতু নির্মাণে সম্মত হয়েছেন।