সিধু নরম, চাপা পড়ছে কলহ, দল ছাড়বেন অমরিন্দর
পাঞ্জাবে কংগ্রেসের কলহ সম্ভবত ধামাচাপা পড়তে চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নির সঙ্গে বৈঠক করেন পদত্যাগী সভাপতি নভজ্যোৎ সিং সিধু। বৈঠকের আগে সিধুর উপদেষ্টা জানান, শিগগিরই বিতর্কের অবসান ঘটবে। বৈঠকের পর বিভিন্ন সূত্রের মতে, ভোট পর্যন্ত সিধুই দলের সভাপতি থাকবেন।
পাটিয়ালা থেকে গাড়ি চালিয়ে সিধু চণ্ডীগড় পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠক করতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সিধু বা দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা না হলেও দলীয় সূত্রের খবর, নিয়োগসংক্রান্ত যেসব বিষয়ে সিধু আপত্তি জানিয়েছিলেন, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হবে। সিধুও পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেবেন।
পাঞ্জাবে শাসক কংগ্রেসের এই অভ্যন্তরীণ কলহের মাঝে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেসে তিনি আর থাকবেন না, তবে বিজেপিতেও যোগ দিচ্ছেন না। কংগ্রেসের এই ডামাডোলের মধ্যে রাজ্য সফররত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দেন, ভোটে জিতে সরকার গড়তে পারলে সব রাজ্যবাসীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন। পাঞ্জাব বিধানসভার ভোট আগামী বছরের মার্চ মাসে।
সিধুর বিদ্রোহের মাঝেই বুধবার দিল্লি আসেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। দেখা করেন প্রথমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে। পরে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিকল্প রাজনীতির দরজা তিনি খুলে রাখছেন। সেই থেকে তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা প্রবল হয়ে ওঠে। তবে বুধবার রাতেই তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, এখনো কংগ্রেসে আছেন ঠিকই, তবে আর নয়। কংগ্রেস তিনি ছাড়বেন। তবে এর অর্থ বিজেপিতে যোগদান নয়।
রাজ্যের দুই দফার মুখ্যমন্ত্রী কেন কংগ্রেস ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন, অমরিন্দর তা স্পষ্ট করে জানাতে দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি বলেন, ‘৫২ বছর রাজনীতি করছি। রাজনীতি করছি নীতি ও আদর্শ আঁকড়ে। কিন্তু তবু আমার সঙ্গে যা করা হলো, তা মানা কঠিন। সকাল সাড়ে ১০টায় কংগ্রেস সভানেত্রী পদত্যাগ করতে বললেন। বিকেলে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এত বছর পর যে দল আমাকে সন্দেহ করে, যে দলে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, সেখানে দলে থাকার প্রয়োজনও নেই।’ স্পষ্ট করে কংগ্রেস ছাড়ার কথা বললেও অমরিন্দর জোরের সঙ্গে জানান, বিজেপিতে তিনি যোগ দেবেন না। অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে তিনি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছেন। অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনা করেছেন সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে।
অমরিন্দরের দলত্যাগ যখন অবধারিত, তখন সিধু কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে গতকাল দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী চান্নির সঙ্গে। সেই সাক্ষাতের আগে সিধুর ব্যক্তিগত উপদেষ্টা মহম্মদ মুস্তাফা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সভাপতি পদে ইস্তফা দিলেও সিধুর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। তিনি তা ফিরিয়ে নিতে পারেন।
সিধুকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রীই। বলেন, যে যে নিয়োগের বিষয়ে তাঁর আপত্তি, খোলামনে সে নিয়ে আলোচনায় তিনি প্রস্তুত। সিধুকে চান্নি ‘পরিবারের কর্তা’ বলেও সম্মান জানান। প্রায় একই সময়ে সিধুর শিবির থেকে বলা হয়, শিগগিরই অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। সিধু পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেবেন। সিধুর উপদেষ্টা বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন সিধু নেতৃত্বের অবমাননা করবেন না।
রাজ্য রাজনীতির এই ডামাডোলের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে আম আদমি পার্টি। দলের শীর্ষ নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দুই দিনের রাজ্য সফর শুরু করেছেন বুধবার। তিনি জানিয়েছেন, ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে রাজ্যের সর্বত্র বিনা মূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করবেন। তিনি বলেন, প্রতি মহল্লা, প্রতি ব্লক ও জেলায় উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরি করবেন। প্রত্যেকের জন্য সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে সরকারি খরচে। ওষুধের খরচও লাগবে না। তিনি বলেন, এমনকি ১০-২০ লাখ টাকার অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও তাঁর সরকার করবে বিনা মূল্যে। সরকারি হাসপাতালগুলো সেভাবে গড়ে তোলা হবে।