'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' কী?

পাকিস্তানসংলগ্ন কাশ্মীর সীমান্তে গোলযোগপূর্ণ নিয়ন্ত্রণরেখায় গতকাল বুধবার রাতে শুরু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামের এ অভিযানে দুজন নিহত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতে অনুপ্রবেশ ও হামলা চালাতে প্রস্তুত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয় এ ধরনের অভিযানে। অভিযানকালে ভারতীয় পক্ষে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ওই হামলার পরই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শব্দটি নিয়ে সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কোনও যুদ্ধ নয়। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই কোনও না কোনো সময়ে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কোনো দেশের সেনাবাহিনী ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামের হামলা অতর্কিতে চালায়। এ নিয়ে কোনো পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হয় না। খুব অল্প সময়ে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শত্রুদের গোপন আস্তানায় বা দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে চালানো হয় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। হামলা চালিয়ে শত্রুদের ঘাঁটিগুলোকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেনাবাহিনী আর ওই এলাকায় মোতায়েন থাকে না বা ওই এলাকা দখল করে না। হামলার উদ্দেশ্য সফল হলেই সেনারা নিজ ডেরায় ফিরে আসেন। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে শত্রুদের আটক বা গ্রেপ্তারও করা হয় না। হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

মোদ্দা কথা একেবারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানাই হলো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কম রেখে লক্ষ্যে পূর্ণ করাই হলো এ হামলার মূল উদ্দেশ্য। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র মূল মন্ত্র হলো নিশানাকে নির্ভুলভাবে বেছে নিতে হয়। ‘এটা না হলে, ওটা’ বা ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড’ এখানে খাটে না।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সম্পর্কে ভারতের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান ফলি হোমি এনডিটিভিকে বলেন, ‘এটি একটি রণকৌশল। আপনি সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধন করে শত্রুদের বড় বিস্ময় উপহার দেবেন।’ অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শংকর প্রসাদ বলেন, ‘এটি একটি জটিল অপারেশন। এ হামলা চালাতে খুব সাহস ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। এ হামলা চালানো খুব শক্ত কাজ। লক্ষ্যমাত্রা অস্থাবর থাকে। এর অর্থ হলো লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই ফিরে আসা। এ দলের প্রত্যেক সদস্যদের নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব থাকে।’

ভারতের পাঠানকোট সেনাছাউনিতে হামলার পর উরি সেনাছাউনিতে পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ওই হামলায় উরিতে ১৮ জন জওয়ান নিহত হয়। এ হামলার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। তারপর এল এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।

এর আগে ২০১৫ সালে মণিপুরে রাজ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায় নাগা জঙ্গিরা। এরপরই মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলে সীমান্ত পেরিয়ে ওই দেশের জঙ্গলে ঢুকে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনারা। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর বড় উদাহরণ হল পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিলের অপারেশনে রাতের অন্ধকারে নিহত হয়েছিল ওসামা বিন লাদেন।

আরও পড়ুন: