আম আদমির দখলে দিল্লি পৌরসভাও

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল
ফাইল ছবি: এএনআই

বিধানসভার পর দিল্লি পৌরসভার দায়িত্বও নিতে চলেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। বিজেপির প্রবল প্রতিরোধ রুখে মোট ২৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে আপ জিততে চলেছে ১৩২ থেকে ১৩৪টি। বিজেপির পাওয়ার সম্ভাবনা ১০৪টির মতো ওয়ার্ড, কংগ্রেসের ১০টি। গত সিকি শতক দিল্লি বিধানসভার দখল নিতে বিজেপি ব্যর্থ হলেও পৌরসভা ছিল তাদেরই অধীন। এবার সেটাও তারা হারাতে চলেছে আপের কাছে।

রাজধানী রাজ্য দিল্লি পৌরসভা বারবার ভাঙাগড়া হয়েছে। কংগ্রেসের আমলে একটি পৌরসভা ভেঙে তিনটি করা হয়। গত ১০ বছর সেই ৩টিই ছিল বিজেপির দখলে। কংগ্রেস আমলেও বিজেপি পৌরসভা হাতছাড়া করেনি। গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তিনটি পৌরসভার বিলুপ্তি ঘটিয়ে আবার একটি করে দেয় (নিউ দিল্লি পৌরসভার অস্তিত্ব অবশ্য পৃথকই আছে)। ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাস ঘটানো হয়। ২৭২ আসনের জায়গায় করা হয় ২৫০টি এবং আচমকাই গুজরাট নির্বাচনের সময় পৌরসভার ভোট গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজেপি ভেবেছিল, গুজরাটে আপকে আবদ্ধ রেখে দিল্লির পৌরসভা তারা দখলে রাখবে। কিন্তু হলো তার বিপরীত। বিধানসভার পর পৌরসভার ভারও কেড়ে নিল আপ।

এই লড়াইয়ে জিততে বিজেপি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। প্রচারের মধ্যমণি করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি করা আবাসন প্রকল্পের চাবি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীই শুরু করেছিলেন দলের প্রচারাভিযান। সর্বত্র তাঁর ছবি রেখেই ভোট চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জে ডি নাড্ডাসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রচার করেছেন। বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল, আপ ১৫০ থেকে ১৭০টি ওয়ার্ডে জিতবে। জয় তত বিপুল না হলেও গণনার মাঝপথে স্পষ্ট, পৌরসভা দখলে ১২৬ আসনের চেয়ে ৭ থেকে ১০টি বেশি পেয়ে আপ দৌড় শেষ করতে চলেছে। বিজেপি ঘোরাফেরা করছে ১০০’র আশপাশে। কংগ্রেসের দখলে আগে ছিল ২৮টি আসন। এবার তারা পাবে ৯ থেকে ১১টি।

আজ বুধবার বেলা একটায় রাজ্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, আপ জিতেছে ১০৬টি কেন্দ্র। তারা এগিয়ে রয়েছে আরও ২৬টিতে। বিজেপি জিতেছে ৮৪ আসন। আরও ২০টিতে তারা এগিয়ে। কংগ্রেস থমকে রয়েছে ১০–এ।

পৌরসভার ভোটের ইস্যু ছিল প্রধানত তিনটি। আবর্জনার ব্যবস্থাপনা, দূষণ রোধ ও বস্তি উন্নয়ন। জঞ্জাল ও আবর্জনার সুব্যবস্থাপনায় বিজেপি গত সিকি শতক ধরে ব্যর্থ। দূষণ রোধে আপ সাহায্য নেয় পাঞ্জাবে নিজের দলের সরকারের। এই বছর ওই রাজ্যের বিস্তীর্ণ জমিতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর হার ৩৮ শতাংশ কম হয়েছে। প্রচারে আপ সেটা বড়ভাবে তুলে ধরেছে। বস্তি উন্নয়নে আপ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অসহযোগিতার’ বিষয়টি তুলে ধরে বলেছে, দিল্লির জমির অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই চাইলেই তারা দরিদ্রদের জন্য বসতি তৈরি করতে পারে না। বিজেপি তার প্রচারে বড় করে তুলে ধরেছিল ‘দুর্নীতি’র প্রসঙ্গ। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির চেয়ে আপ-এর ওপরই বেশি ভরসা রেখেছে রাজধানীর জনতা। আগেরবারের তুলনায় তারা তাই ৯০টির মতো আসন বাড়িয়ে পৌরসভার দখল নিতে চলেছে।

এই ক্ষেত্রে বিজেপির হাতিয়ারকেই অস্ত্র করেছে আপ নেতৃত্ব। দলের সভাপতি অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং অন্য শীর্ষ নেতারা মোদির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ তত্ত্বকে তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন। বলেছেন, সুষ্ঠু পরিষেবার জন্য পৌরসভার দায়িত্ব পাওয়া রাজ্য সরকারের কাছে জরুরি।