পাঁচ রাজ্যে জয় চায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট

সোনিয়া গান্ধী
ফাইল ছবি

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি মনে করে দেশের মানুষ পরিবর্তন চাইছে। কংগ্রেস সেই চাহিদা পূরণ করবে। তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদে দুই দিনের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে ওই পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে কংগ্রেস জানিয়েছে, পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস প্রমাণ করবে, দেশের মানুষ তাদের ফিরে পেতে চাইছে।

কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে এই আশাবাদের কথা শুনিয়ে বলা হয়েছে, কংগ্রেসই দেশে ফিরিয়ে আনবে আইনের শাসন ও সব ধরনের স্বাধীনতা। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বহুত্ববাদের বিকাশ ঘটাবে।

চলতি বছরের শেষে তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মিজোরাম রাজ্যে বিধানসভার ভোট হবে। এর কয়েক মাস পরই লোকসভার নির্বাচন। কর্ণাটক রাজ্যে জয়ের পর তেলেঙ্গানা দখলে কংগ্রেস মরিয়া। তাই হায়দরাবাদকে বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্য। সেই বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী সংগঠনকে জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথা শোনানোর পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, গুরুতর সমস্যা থেকে মানুষের চোখ ফেরাতে বিজেপি চেষ্টার অন্ত রাখবে না। নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করবে। কিন্তু তাদের পাতা ফাঁদে কেউ যেন পা না দেয়।

ফাঁদের কথা শোনানোর মধ্য দিয়ে রাহুল গান্ধী ‘সনাতন ধর্ম’ নিয়ে ওঠা বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে ধারণা। তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধি দিন কয়েক আগে ‘সনাতন ধর্মের খারাপ’ দিকগুলোর উল্লেখ করে বলেছিলেন, ও থেকে মুক্ত হতে হবে। তা নিয়ে ডিএমকেসহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে বিজেপি ‘হিন্দুবিরোধী’ বলে প্রচার শুরু করেছে।

রাহুল মনে করেন, এই ধরনের অহেতুক বিতর্ক বিজেপির ফাঁদ। সেই ফাঁদে ফেলে বিজেপি চায় মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, ঘৃণা ভাষণ, সাম্প্রদায়িকতা, মণিপুর, চীনা আগ্রাসনের মতো গুরুতর সমস্যা নিয়ে মানুষ যেন সরব না হয়।

রাহুল বলেন, বিজেপি চাইবে বিরোধীরা এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকুক। সমস্যা নিয়ে যেন তারা না ভাবে। তিনি বলেন, ওই ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না। কংগ্রেস কর্মীদের আদর্শগত স্বচ্ছতা বজায় রেখে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির মোকাবিলা করতে হবে। মানুষ শাসকের বদল চাইছে। সেই চাহিদা কংগ্রেসকেই পূর্ণ করতে হবে।

কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে মনে করিয়ে দেন, প্রচারের মধ্য দিয়ে বিজেপি নরেন্দ্র মোদির এক মেকি ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। তথ্যের ব্যবহারে সেই ভাবমূর্তি ভাঙতে হবে।

তেলেঙ্গানা রাজ্য নিয়ে কংগ্রেস আশাবাদী হতেই পারে। দুই দিনের বৈঠকের পর গতকাল রোববার যে জনসভায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা ভাষণ দেন, তা জনসমুদ্রের আকার নিয়েছিল। ওই জনসমাগম বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্যের মানুষ গত ১০ বছরের শাসনের অবসান দেখতে চাইছে।

২০১৪ সালে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে সেখানে রাজত্ব করছে কংগ্রেসত্যাগী চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল তেলেঙ্গানা (পরে নাম বদলে ভারত) রাষ্ট্র সমিতি।

এবার তিনি বিজেপি ও কংগ্রেস দুই দলের থেকেই সমদূরত্ব রাখার নীতি গ্রহণের কথা বললেও রাহুল মনে করিয়ে দেন, বিআরএস ও আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল এআইএমআইএম বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনীতি করছে। কংগ্রেস তাদের পরাস্ত করে রাজ্যে ক্ষমতাসীন হবে।

মূলত, কংগ্রেস জোরালোভাবে জানিয়ে দিয়েছে, পাঁচ রাজ্যের জনগণই কংগ্রেসকে ফিরে পেতে চাইছে। সেই চাহিদা পূরণ করাই দলের কাজ। সে জন্য আদর্শ আঁকড়ে জোটবদ্ধভাবে সবাইকে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে। খাড়গে, সোনিয়া ও রাহুল—তিনজনই বলেছেন, কর্ণাটকে সব ভুলে দল লড়াই করেছে ও জিতেছে। অন্যত্রও সেভাবে বিজেপির মোকাবিলা করতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় অন্য কোনো উপায় নেই। ওয়ার্কিং কমিটির রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চ্যালেঞ্জ গ্রহণে দল প্রস্তুত।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সব দিক থেকে মজবুত করার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। খাড়গে, সোনিয়া, রাহুল বারবার বলেছেন, জোট ও জোটের শরিক দলের সঙ্গে কংগ্রেসকে সহযোগিতা করতে হবে। তা হলেই বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে।

শরিকদের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বলার মধ্য দিয়ে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতার প্রশ্নে দল অহেতুক জেদাজেদি করবে না। শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো বিশেষ রাজ্যের নাম করেনি। কিন্তু এটা স্পষ্ট, ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে তিনটি রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই টানাপোড়েন রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের, দিল্লি ও পাঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আম আদমি পার্টির। এই তিন রাজ্যের আসন–জট কীভাবে কাটবে, তা নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা হলেও এখনই তা প্রকাশ করতে কংগ্রেস রাজি নয়। তবে দিল্লিতে প্রদেশ সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সভাপতি করা হয়েছে অরবিন্দ সিং লাভলিকে, যিনি আগের সভাপতি অনিল চৌধুরীর মতো কট্টর আম আদমি পার্টি বিরোধী নন।

ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে দলের একটা বড় অংশ মনে করছে, বছর শেষে পাঁচ রাজ্যের ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। এই মহল মনে করে, পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের ফল ভালো হবে। তখন দল একটা শক্তিশালী অবস্থান থেকে আসন সমঝোতায় আসতে পারবে। তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি অবশ্য চায় অক্টোবরের মধ্যেই আসন রফা সেরে ফেলতে।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক চলাকালেই সিপিএম জানিয়ে দিয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকলেও  ওই জোটের সমন্বয় কমিটিতে তারা কোনো প্রতিনিধি পাঠাবে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১৪ জনের ওই সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

সিপিএম জানিয়েছিল, তারা পরে তাদের সদস্যের নাম জানাবে। কিন্তু গত শনিবার পলিট ব্যুরোর বৈঠকের পর তারা জানায়, রাজ্যস্তরীয় বাধ্যবাধকতার (পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিরোধিতা) দরুন সমন্বয় কমিটিতে তারা প্রতিনিধি পাঠাবে না। যদিও ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করতে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রাখছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সিপিএম সরব।